বাংলাদেশের রাজনীতিতে কিছু ব্যক্তিত্ব আছেন, যাদের নাম উচ্চারিত হলেই মানুষের হৃদয়ে নতুন বিশ্বাসের আলো জ্বলে ওঠে। তারেক রহমান সেই বিরল ব্যক্তিত্বদের একজন, যিনি শুধুই নেতা নন, তিনি আশা, প্রেরণা ও নতুন ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতির নাম।
আজ ২০ নভেম্বর, জনতার আস্থার বাতিঘর তারেক রহমানের জন্মদিন। আজকের এই দিন শুধু একজন জননেতার জন্মদিন নয়, একটি অবিচল বিশ্বাসের, এক অদম্য সাহসের, এক স্বপ্নবাহী নেতৃত্বের পুনর্জাগরণের দিন এটি। তারেক রহমান শুধু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নন; তিনি দেশপ্রেমে উজ্জ্বল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের প্রতীক। ফ্যাসিবাদী প্রতিপক্ষের অমানবিক প্রতিহিংসা, ষড়যন্ত্র ও অবিচারের বোঝা বুকে নিয়েও তিনি মানুষের সেবা করার অঙ্গীকার থেকে কখনো সরে যাননি। সুদূর প্রবাস থেকে আজও দলকে পরিচালনা করছেন দূরদর্শিতা, মমতা ও অবিচল দায়িত্ববোধ দিয়ে।
২০ নভেম্বর তাঁর জন্মদিন এলে তাই হৃদয়ের গভীর থেকে একটাই প্রার্থনা বেরিয়ে আসে, এই মহৎ মানুষের জীবন হোক আলোকিত, তাঁর পথচলা হোক বিজয়ের এবং তাঁর প্রত্যাবর্তন হোক বাংলাদেশের নতুন আশার সূর্যোদয়।
তারেক রহমানের রাজনীতি শুরু হয়েছিল দায়িত্বের জায়গা থেকে, কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেটি রূপ নিয়েছে এক দর্শনে, এক মানবিক রাজনৈতিক চেতনায়। তাঁর কাছে রাজনীতি মানে ক্ষমতার চেয়ার নয়, মানুষের কল্যাণ। তিনি যেভাবে দেশের সাধারণ মানুষ, কর্মজীবী শ্রেণি, তরুণ সমাজ এবং পশু-পাখির মতো নীরব প্রাণীদের প্রতিও ভালোবাসা দেখিয়েছেন- তা তাঁকে এক অনন্য চরিত্রে রূপ দিয়েছে। রাজনীতি, মানবতা ও দেশপ্রেম- এই তিনের সীমানা তাঁর জীবনে এক বিন্দুতে মিলেছে।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামের মানবিক সংগঠনের মাধ্যমে তিনি অসহায়, দরিদ্র ও বিপন্ন মানুষের পাশে রয়েছেন নীরবে। সাহায্যের রাজনীতি নয়, এ ছিল মানবিক দায়িত্বের প্রকাশ। কারও ঘর পুড়ে গেলে, কারও সন্তান চিকিৎসার অভাবে কষ্ট পেলে, কোনো অসহায় পরিবারের দুঃখ-কষ্টে বা অনাহারে দিন কাটালে, তারেক রহমানের সহায়তা সেখানে পৌঁছে গেছে নিঃশব্দে, আলোচনার বাইরে থেকে। তিনি জানেন, মানবতার সেবা প্রচারণা নয়, বরং অন্তর্নিহিত দায়িত্ব।
সারা দেশে অসংখ্য হতদরিদ্র, অসহায় ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন মানবিক ও আবেগী নেতা তারেক রহমান। তাঁর এত বিস্তৃত মানবিক কর্মকাণ্ডের ভিতর থেকে মাত্র তিনটি হৃদয়স্পর্শী উদাহরণ এখানে তুলে ধরা হলো-
রাজবাড়ী জেলার জন্মান্ধ গফুর মল্লিক (৮০) দীর্ঘদিন ধরে বৃদ্ধ বয়সের নানা কষ্ট সঙ্গী করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ট্রেনে নাড়ু, টেস্টি হজমি ও বাদাম বিক্রি করে দিন কাটাচ্ছিলেন। দৃষ্টিহীনতা, বয়সের ভার ও অনিশ্চিত জীবিকার এই নির্মম বাস্তবতা দেখে ব্যথিত হন তারেক রহমান। মানুষের প্রতি তাঁর সেই স্বভাবসুলভ মমতা ও মানবিকতার টানে তিনি এগিয়ে আসেন সহায়তার হাত বাড়িয়ে। ৩০ অক্টোবর ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সংগঠনের মাধ্যমে তিনি গফুর মল্লিককে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করেন, যা জীবনযুদ্ধের ক্লান্ত পথে এক টুকরো উষ্ণতার মতো এই দুর্বল বৃদ্ধের জীবনে নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে। আর্থিক সহায়তা পেয়ে আবেগাপ্লুত গফুর মল্লিক বলেন, ‘আল্লাহর হুকুমে তারেক রহমান আমাকে সাহায্য করেছেন। এই টাকা দিয়ে আমি এক পাখি জমি কিনব, বাড়িতেই কিছু সদাইপাতি এনে টুকটাক ব্যবসা করব। আর ট্রেনে নাড়ু বিক্রি করব না। তারেক রহমানের জন্য আমি দোয়া করি।’
গফুর মল্লিকের চোখে আনন্দের জল, মুখে খুশির হাসি, এভাবেই তারেক রহমানের মানবিক সহায়তা জন্ম দিয়েছে এক নতুন জীবন ও নতুন স্বপ্নের আলো।
২২ বছরের তরুণ তানজীমুলের শরীরে বাসা বেঁধেছে রক্তক্ষয়জনিত মরণব্যাধি হিমোফিলিয়া। ভয়াবহ এই রোগের কারণে তার দুই হাতের কনুই, দুই পায়ের হাঁটুসহ মোট চারটি জয়েন্টই বেঁকে গেছে। দিন দিন স্বাস্থ্য অবস্থার অবনতি ঘটছে, আর মৃত্যুর দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এই অসহায় তরুণের জীবন। এরই মাঝে পরিবারের ওপর নেমে আসে আরেকটি নির্মম আঘাত, তানজীমুলের মায়ের ধরা পড়ে ক্যানসারের মতো মারণব্যাধি। নিজে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থেকেও সন্তানের চিকিৎসা নিয়ে যে আশা-আকুলতা তার মনে, সেটুকুও তীব্র অভাব-অনটনের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছিল। ‘ছেলে হয়ে যাচ্ছে পঙ্গু, মায়ের ক্যানসার’- একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত এই মানবিক আর্তনাদের প্রতিবেদনটি পৌঁছে যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে। সংবাদটি দেখেই তিনি গভীরভাবে মর্মাহত হন এবং তৎক্ষণাৎ ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ককে বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশনা দেন।

২৭ অক্টোবর ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আবেগঘন বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নিজের মা ও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ত্যাগের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মা ছয়বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন, কিন্তু আপনাদের ছেড়ে আসেননি। শেখ হাসিনা আমাদের ৪০ বছরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, তবু মা কখনো আপস করেননি। কারণ তাঁর লক্ষ্য ছিল ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।’
তিনি উদাহরণ টানেন সেই ‘আসল মায়ের’ গল্পের, যিনি সন্তানের ক্ষতি হতে দেননি এবং বলেন, ‘আপনারাও সেই আসল মায়ের মতো হোন, ঐক্যের স্বার্থে ত্যাগ শিখুন।’
তারেক রহমানের কণ্ঠে তখন আবেগ ও অশ্রু মিশে যায়। সভায় উপস্থিত নেতাদের অনেকেই কান্না ধরে রাখতে পারেননি। সভা শেষে একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘তারেক রহমানের কথায় ছিল না রাজনীতি, ছিল এক মা ও ছেলের আত্মত্যাগের গল্প।’ তারেক রহমানের মধ্যে যেমন মানবিক কোমলতা আছে, তেমনি প্রশাসনিক দৃঢ়তাও প্রবল। দলের অভ্যন্তরে কোনো অনিয়ম বা শৃঙ্খলাভঙ্গ তিনি সহ্য করেন না। একদিকে তিনি হাসিমুখে কর্মীর কাঁধে হাত রাখেন, অন্যদিকে প্রয়োজন হলে সেই কর্মীর ভুল ধরতেও দ্বিধা করেন না। এই ভারসাম্যপূর্ণ নেতৃত্ব তাঁকে আলাদা করে তোলে অন্য সব রাজনীতিকের চেয়ে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছেন। ১৮ সেপ্টেম্বর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে তিনি স্পষ্ট জানান, দলে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অসদাচরণ কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে ৭ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘শৃঙ্খলাই দলের শক্তি’ এবং বিএনপি সততা ও স্বচ্ছতার ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক সংগঠন। তরুণদের আশা পূরণ, তৃণমূলকে শক্তিশালী করা এবং জনগণের সেবায় নিবেদিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বার্তার শেষে তিনি আরও বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ থাকুন, শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকুন, জনগণের সেবায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকুন- তাহলেই গণতন্ত্রের পথ উজ্জ্বল হবে।’
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আগামীতে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার আমলের সব গুম, খুন ও অন্যায় নিয়ে সুষ্ঠু বিচার করা হবে। যে মানুষগুলো এ দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্যাতিত হয়েছে, তাদের ন্যায্য বিচার দিতে হবে। অন্যায়কারীকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
তারেক রহমান আরও জানান, ‘জুলাই-আগস্ট মাসে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, নির্যাতিত ও শহীদ হয়েছেন, সেই হত্যারও বিচার আমরা করব, ইনশাল্লাহ।’
তরুণ প্রজন্ম আজ তারেক রহমানকে দেখে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে। তাঁর বক্তৃতা, ভিডিও বার্তা, দিকনির্দেশনা, সবকিছুতেই তারা খুঁজে পায় যুক্তি, বিশ্বাস ও দেশপ্রেমের সংমিশ্রণ। যেখানে রাজনীতি এখন প্রায়ই বিভাজনের প্রতীক, সেখানে তারেক রহমান ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তিনি তরুণদের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনছেন নৈতিকতার হাত ধরে, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোয়।
ব্যক্তিজীবনে তাঁর সরলতা, বিনয় ও পারিবারিক মূল্যবোধও সমান প্রশংসনীয়। মা বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা, পরিবারের প্রতি ভালোবাসা এবং তাঁর নম্র আচরণ, সব মিলিয়ে তিনি মানুষের কাছে ‘নেতা’ নয়, বরং ‘আপনজন’। তিনি জানেন, রাজনীতি মানে জনগণের সঙ্গে সম্পর্কের রাজনীতি। বিলাসবহুল জীবনযাপন নয়, তিনি বেছে নিয়েছেন নিঃশব্দ দায়িত্ববোধের জীবন। যিনি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেন না, বরং রাজনীতিকে দেখেন সেবার মহাসাধনা হিসেবে। আজকের বাংলাদেশে যখন মানুষ বিভ্রান্ত, হতাশা ও অনিশ্চয়তায় ঘেরা, তখন তারেক রহমান যেন এক আশার বাতিঘর। তিনি সেই মানুষ, যিনি বিশ্বাস করেন, জাতি কখনো পরাজিত হয় না যদি তার তরুণরা আদর্শে অটল থাকে, যদি নেতারা সৎ থাকেন এবং যদি মানুষের ভালোবাসা রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়। তাঁর রাজনীতি প্রতিশোধের নয়, এটি পুনর্গঠনের রাজনীতি। তাঁর স্বপ্ন, একটি ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ- যেখানে মানুষ ভয়হীনভাবে বাঁচবে, যেখানে রাষ্ট্র হবে নাগরিকের অভিভাবক, নয় শাসক।
বাংলাদেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক আজ এক কণ্ঠে প্রার্থনা করছেন, আল্লাহ তারেক রহমানকে সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু দান করুন। তিনি যেন দেশের গণতন্ত্র ও মানবতার পুনর্জাগরণের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকেন। ২০ নভেম্বর তাই কেবল একটি জন্মদিন নয়; এটি এক বিশ্বাস, এক প্রেরণা, এক নব সূচনার দিন। যে দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই জাতি এখনো শেষ হয়ে যায়নি, কারণ তারেক রহমানের মতো নেতারা এখনো আমাদের আশার প্রতীক হয়ে আছেন। তারেক রহমান যেমন মানবিক, তেমনি দৃঢ়; যেমন কোমল, তেমনি আপসহীন। ভালোবাসার প্রয়োজন হলে তিনি হৃদয় উজাড় করে দেন, আর দায়িত্বের মুহূর্তে দেখান কঠোরতার প্রস্তুতি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর মতো এমন ভারসাম্যপূর্ণ নেতার নেতৃত্ব আজ বড়ই প্রয়োজন।
আজ তাঁর জন্মদিন, তাই কেবল শুভেচ্ছার নয়, বরং নতুন করে আশায় বুক বাঁধার দিন। শুভ জন্মদিন, মানবতার প্রতীক তারেক রহমান, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের দীপ্ত বাতিঘর।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, আহ্বায়ক, আমরা বিএনপি পরিবার ও সদস্য, বিএনপি মিডিয়া সেল