এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪৯ জন। প্রিয়জন হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। ওষুধ, ধোঁয়া কিংবা মশারিতে ঠেকানো যাচ্ছে না মশা। এ পরিস্থিতিতে আলোচনা চলছে ডেঙ্গু টিকা নিয়ে। তবে এখন পর্যন্ত সব বয়সির জন্য কার্যকর টিকা না থাকায় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. আবু জাফর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকার এই মুহূর্তে ডেঙ্গু টিকা প্রয়োগের বিষয়টি নিয়ে ভাবছে না। কারণ, ডেঙ্গুর টিকা এখনো অনেক ক্ষেত্রে গবেষণাধীন এবং সব বয়সির জন্য কার্যকর টিকা এখনো নেই। কিছু দেশে সীমিত পরিমাণে ডেঙ্গুর টিকা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু কোনো দেশই এটি বিস্তৃতভাবে দিচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিয়ন্ত্রণ এবং জনসচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জ্বর হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোগীরা যদি শেষ পর্যায়ে হাসপাতালে আসেন, তখন আমরা আর কিছুই করতে পারি না। কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সংক্রমিত এলাকায় প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় কাজ করছেন। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত স্যালাইনের জোগান রয়েছে এবং ডেঙ্গুর এনএস১ পরীক্ষা ফ্রি করা হয়েছে। যদি আমরা সবাই সচেতন না থাকি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।’ জানা যায়, পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার প্রজাতির মশা রয়েছে, যার ২৫ ভাগ হচ্ছে এডিস। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১২৬ প্রজাতির মশা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৬ প্রজাতির এডিস মশা রয়েছে। তবে এর দুটি প্রজাতি, এডিস ইজিপ্টি ও এডিস অ্যালবোপিকটাস ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে ও মানুষকে সংক্রমিত করে। এডিস মশার ঘনত্ব নির্ভর করে কিছু অনুকূল পরিবেশের ওপর, যেমন বৃষ্টিপাত। এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি ডেঙ্গু টিকা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। যাদের আগে ডেঙ্গু হয়েছিল এবং বয়স ৯ থেকে ১৬ বছর শুধু তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অনুমোদিত টিকা হলো ডেনভ্যাক্সিয়া। এই টিকার তিনটি ডোজ দিতে হয় ৬ মাস পর পর। অন্য টিকার নাম হচ্ছে কিউডেঙ্গা। এই টিকা তিন মাস ব্যবধানে দুটি ডোজে দেওয়া হয়। যারা আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়নি, তাদেরও দেওয়া যায়। তবে দুটি টিকারই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।
ডেনভ্যাক্সিয়া ১৯ থেকে ২১টি দেশে অনুমোদিত, যার মধ্যে ব্রাজিল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোও রয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দেশের উপযোগী ডেঙ্গু টিকা এখনো নেই। আইসিডিডিআরবিতে তৈরি একটি ভ্যাকসিনের সেকেন্ড ফেজ ট্রায়াল হয়েছে, থার্ড ফেজ ট্রায়াল এবং অনুমোদনের পর সেটি আমাদের দেশে উপযোগী হতে পারে। যতক্ষণ তা অনুমোদিত হবে না, ততক্ষণ আমাদের ডেঙ্গু প্রতিরোধে মনোযোগ দিতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র থেকে বের হয়ে বিকেন্দ্রিকভাবে চিন্তা করতে হবে।’ দেশের শীর্ষ স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের লার্নার মেডিকেল কলেজ অব মেডিসিনের সহযোগিতায় একটি এক ডোজের ডেঙ্গু টিকা ‘টিভি০০৫’ তৈরি করছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এই টিকা দেশে প্রথমবারের মতো সফলভাবে সেকেন্ড ফেজ ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে, যা চারটি ডেঙ্গু সিরোটাইপের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করেছে। ডেঙ্গুতে আরও ছয়জনের মৃত্যু : দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৮৮ জন। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪৯ জন, আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৭ হাজার ৭১২ জন।