জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় অনুমোদন দেওয়ার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা থেকে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাসকে বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় হামাসকে সাধারণ ক্ষমা মঞ্জুরের প্রস্তাব রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকে হোয়াইট হাউস সফরের সময় নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে এ পরিকল্পনা সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু এখন তার বক্তব্য এ ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে, সামনে আগানোর পথে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের মতপার্থক্য রয়েছে। হামাসও যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে।
কূটনীতিকরা ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন, ইসরায়েল ও হামাস দুই পক্ষেরই অটল অবস্থানের কারণে পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়া কঠিন হচ্ছে। তাছাড়া এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা কিংবা প্রায়োগিক ব্যবস্থা নেই। তার পরও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিকল্পনাটি জোরালো সমর্থন পেয়েছে। মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জাতিসংঘের ভোটের প্রতিক্রিয়ায় এক্সে একাধিক পোস্ট করেন। এক পোস্টে তিনি ট্রাম্পের প্রশংসা করেন। আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, পরিকল্পনাটি শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। কারণ এটি গাজার ‘পূর্ণ অসামরিকীকরণ, নিরস্ত্রীকরণ ও উগ্রপন্থা দূরীকরণের কথা বলে।’ নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইসরায়েল সব প্রতিবেশীর জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধির হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।’ প্রতিবেশী দেশগুলোকে তিনি হামাস ও তাদের সমর্থকদের অঞ্চলটি থেকে বের করে দিতে ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দিতে বলেছেন। হামাসকে বহিষ্কার করা বলতে প্রধানমন্ত্রী কী বোঝাতে চেয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে নেতানিয়াহুর মুখপাত্র বলেন, ‘এর মানে হচ্ছে ২০ দফা পরিকল্পনার রূপরেখা অনুযায়ী গাজায় কোনো হামাস সদস্য থাকবে না এবং গাজায় গোষ্ঠীটির ফিলিস্তিনি জনগণকে শাসন করার কোনো ক্ষমতাও থাকবে না, সেটি নিশ্চিত করা।’ ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনায় বলা আছে, যেসব হামাস সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে রাজি হবে এবং অস্ত্রসমর্পণ করবে তাদের ক্ষমা করা হবে। আবার যেসব হামাস সদস্য গাজা ছাড়তে চাইবে, তাদেরও নিরাপদে তৃতীয় কোনো দেশে যেতে দেওয়া হবে। পরিকল্পনার আরেক দফায় বলা হয়, হামাস গাজা শাসনে কোনো ভূমিকা রাখবে না। তবে গোষ্ঠীটি ভেঙে দেওয়া বা গাজা ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা নেই পরিকল্পনায়। তবে পরিকল্পনায় আরও বলা আছে, পশ্চিম তীরভিত্তিক ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার ফিলিস্তিনিদের ‘আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার’ বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরি করতে পারে। তবে পরিকল্পনাটি নিয়ে জাতিসংঘে ভোটের আগেই নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতা বজায় রেখেছে। এমনকি নেতানিয়াহু গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো সম্পৃক্ততাও চান না।
ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে হামলায় নিহত ১৩ : লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় শহর সিডনে এক ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ১৩ জন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সিডনের কাছে জনাকীর্ণ ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবির আইন আল-হিলওয়েহতে হামলাটি চালিয়েছে তারা। সেখানে তাদের কথিত ‘জঙ্গিরা’ একটি প্রশিক্ষণ শিবির পরিচলনা করছিল বলে অভিযোগ তাদের। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, ফিলিস্তিনের হামাস আন্দোলন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে ওই কম্পাউন্ডটি ব্যবহার করে আসছিল।-রয়টার্স
পরে হামাস এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানায়। বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি বলেছে, ‘যে স্থানে হামলা চালানো হয়েছে সেটি ‘হামাস আন্দোলনের একটি প্রশিক্ষণ কম্পাউন্ড’ জায়নবাদী দখলদার সেনাবাহিনীর এসব দাবি ও অভিযোগ পুরোপুরি বানোয়াট ও মিথ্যা। তাদের অপরাধমূলক আগ্রাসনের বৈধতা দিতে এসব অভিযোগ করেছে তারা।’