বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুতের দাম ও পাওনাসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সিঙ্গাপুরের সালিশি আদালতে যেতে চায় ভারতের আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) লিমিটেড। কোম্পানিটিকে এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট। বাংলাদেশের সঙ্গে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সালিশি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত এক আবেদনে শুনানির পর বিচারপতি মো. বজলুর রহমান ও বিচারপতি উর্মি রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ুম লিটন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জিয়াউর রহমান।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে আদানির সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি অসম, অন্যায্য, প্রতারণামূলক ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী উল্লেখ করে গত বছর ১২ নভেম্বর হাই কোর্টে রিট করেন আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ুম লিটন। সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে চুক্তি সংশোধনে আদানি রাজি না হলে চুক্তি বাতিলের নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে। একই সঙ্গে আদানির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিটি দরকষাকষির মাধ্যমে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে হয়েছে কি না, তা অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশনাও চাওয়া হয় রিটে। প্রাথমিক শুনানির পর গত বছর ১৯ নভেম্বর রুলসহ আদেশ দেন হাই কোর্ট। ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর সম্পাদিত চুক্তিটি দরকষাকষির মাধ্যমে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে হয়েছে কি না, তা অনুসন্ধানে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। আদেশের অনুলিপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিবকে এ কমিটি গঠন করতে বলা হয়। কমিটি গঠনের দুই মাসের মধ্যে চুক্তিসংক্রান্ত প্রতিবেদন ও চুক্তিসংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দাখিল করতে বলেন হাই কোর্ট। এ আদেশের পর হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে সরকার।
আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ুম লিটন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার জানা মতে ওই কমিটি হাই কোর্টে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন দাখিল করেননি। এর মধ্যে দেশবিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে, বিদ্যুতের দাম ও পাওনাসংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে আদানি সিঙ্গাপুরের সালিশি আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি আদানি পাওয়ার লিমিটেড ওই আদালতে যায়, তাহলে হাই কোর্টে বিচারাধীন রুলের বিচারকাজ ব্যাহত হতে পারে। যে কারণে এ ধরনের কার্যক্রম থেকে আদানিকে বিরত রাখার নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেছিলাম। রুল নিষ্পত্তি পর্যন্ত আদানি পাওয়ার লিমিটেডকে সালিশি আদালতে যাওয়ার কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট।’ ইমেইলের পাশাপাশি হাই কোর্টের আদেশটি আন্তর্জাতিক লজিস্টিকস এবং প্যাকেজ ডেলিভারি কোম্পানি ডিএইচএলের মাধ্যমে আদানির ঠিকানায় পাঠানো হবে বলে জানান এই আইনজীবী।
ভারতের ঝাড়খ রাজ্যে নির্মিত আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে পিডিবি। এ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বলে চুক্তি হয় বাংলাদেশের।