শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন ও দেশপ্রেমের যথার্থ প্রতিকৃতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ তাঁর জন্মদিন। জাতীয় নেতা হিসেবে তারেক রহমান বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলের মাধ্যমে যেভাবে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, প্রশংসার দাবিদার। অতি সম্প্রতি তিনি দুটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার দেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দুটি সংবাদমাধ্যমে। এর একটি লন্ডনের ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এবং অন্যটি বিবিসি বাংলায়। এ সাক্ষাৎকার দুটি দেশে ও প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নতুন অনুপ্রেরণা এবং রাজনৈতিক উত্থানের আশাবাদ জাগিয়েছে। ওয়ান-ইলেভেন ও শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পর দেশবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে একটি যথার্থ গণতান্ত্রিক, প্রতিনিধিত্বশীল ও দেশপ্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং রাষ্ট্রে সুশাসন ফিরবে।
তারেক রহমান ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, তিনি ‘দৃঢ়ভাবে আত্মবিশ্বাসী’ যে বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে অবাধ ও নিরপেক্ষ পরিবেশে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসবে। তিনি আরও বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থান প্রকৃত অর্থে সম্পূর্ণ হবে না। তারেক রহমান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানান আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে বিএনপির বিজয়ে কোনো সন্দেহ নেই এবং এককভাবেই সরকার গঠন করা সম্ভব হবে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, জনমত জরিপে বিএনপি এগিয়ে রয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে ফেব্রুয়ারির ভোটের পর তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। আরও জানানো হয় যে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছেন। সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানকে কোনো একক দল বা ব্যক্তি পরিচালনা করেনি; এটি ছিল জনগণের আন্দোলন। এ আন্দোলনের নেপথ্য নকশাকার ছিল গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সাধারণ মানুষ, যারা দলমত নির্বিশেষে এতে অংশ নিয়েছিলেন।
স্বাধীনতার মহান ঘোষক ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের আলোকে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে দল এবং দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা হয়েছিল। ১/১১ সরকারের সময় তারেক রহমানের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়। যার ফলে তাকে চিকিৎসার জন্য প্রবাসে থাকতে হয়েছে। গত ১৭ বছরের স্মৃতিচারণা করার সময় তিনি দুঃখ করে উল্লেখ করেন- তাঁর ছোট ভাই আরাফাত রহমানের করুণ মৃত্যু, তাঁর মা বেগম খালেদা জিয়ার ওপর মানসিক নিপীড়ন ও রাজনৈতিক নিষ্ঠুরতা এবং তাঁর বাবা শহীদ জিয়ার স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে ওই স্থানকে নিশ্চিহ্ন করে দেয় পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। এ কথাগুলো মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। নির্বাসনে থাকার সময় তাঁর যোগাযোগের অনেক সীমাবদ্ধতাও ছিল। আদালতের আদেশে বক্তব্য প্রচারে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এবং এখনো দিয়ে চলেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, বিএনপি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পেলে ‘প্রতিশোধের চক্র’ ভেঙে দেবেন। এর অংশ হিসেবে গত আগস্ট মাস থেকে ৭ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে জোর দিয়ে বলা হয় যে, বাংলাদেশের স্বার্থই সবার আগে থাকবে। বাংলাদেশের স্বার্থ অটুট রেখে যা যা সম্ভব তিনি করবেন। ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য অংশ আদায়ে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয় এবং সীমান্তে ফেলানীর মতো মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি কখনো মেনে নেওয়া হবে না। শেখ হাসিনা ভারতের আশ্রয়ে থাকা প্রসঙ্গে বলা হয়, এতে যদি বাংলাদেশের জনগণের বিরাগ সৃষ্টি হয়, তাহলে সম্পর্ক শীতল থাকবে এমন অবস্থান জনগণের পক্ষ থেকেই নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বলা হয়, বিএনপির মৌলিক নীতি হলো ‘বাংলাদেশ সবার আগে।’ জনগণ, দেশ ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রেখে জাতীয় স্বার্থকেই সবকিছুর কেন্দ্রে রাখা হবে।
আজ এটি স্পষ্ট যে, তারেক রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের রাজনীতি ও জিয়াউর রহমানের অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিতে দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হচ্ছেন। আমি নিজে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে জিয়াউর রহমানের রাজনীতিতে জাগো ছাত্রদল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক পথচলা শুরু করি। জাসাস প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম আহ্বায়ক এবং পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় জাসাসের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। শহীদ জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিতেও তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছি। সেই সুবাদে জিয়া পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সেই অভিজ্ঞতা আজও মনে আছে। দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে শেখ হাসিনার সরকার বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করেছে এবং অসংখ্য বিএনপি কর্মী-সমর্থকের ওপর নির্যাতন, গুম-খুন ও দমন চালিয়েছে। অন্তত ১ হাজার ৫০০ কর্মী আন্দোলনে নিহত হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত বা পঙ্গু হয়েছে। তবু বিএনপি আজও শক্তিশালী জনসমর্থন নিয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। জিয়াউর রহমানের মূল দর্শনই ছিল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আলোকে পাহাড় এবং সমতলের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সুদৃঢ় করা- একটি রেইনবো স্টেট গড়ে তোলাই ছিল তাঁর স্বপ্ন। বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বাস, বিএনপির রাজনীতির ভিত্তি হতে হবে শহীদ জিয়াউর রহমানের অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ নতুনভাবে শুরু করা।
আমাদের প্রত্যাশা, তারেক রহমান হবেন শহীদ জিয়া ও বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী। যে রাজনৈতিক ব্যর্থতার যুগ পেছনে ফেলে এসেছে দেশ, তার একমাত্র বিকল্প হলো তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক জাগরণ, একটি গণতান্ত্রিক ও সুশাসনভিত্তিক রাজনীতি, যা জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক চিন্তাধারার ধারক এবং আধুনিক বাংলাদেশের পথপ্রদর্শক হবে।
লেখক : বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক