বগুড়ায় শিক্ষার্থীদের হাতের ছোঁয়ায় রঙিন হচ্ছে রাজপথ। দেয়ালে লিখন ও আলপনায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে পুরো শহর। চারিদিকে তাকালে মনে হবে যেন বগুড়ার রুপ আগের চেয়ে অনেকটা পাল্টে গেছে। চিরচেনা বগুড়া এখন অন্যরকম সৌন্দর্যে ফুটে উঠেছে। পানি লাগবে পানি, পানি পানি... মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর এই মুখের কথাটিই আজ মুগ্ধ হয়ে আছে। আর আবু সাঈদ ছোট্ট লাঠি হাতে বুক পেতে বগুড়ার সাতমাথায় রং তুলির ছোঁয়ায় দাঁড়িয়ে আছেন। আরো আছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়কার বিভিন্ন দৃশ্য, জাতীয় পাখি, দেশীয় সংস্কৃতির উপকরণ, আন্দোলনে প্রাণ বিসর্জন প্রদানকারিদের ছবি ও বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ছবি অঙ্কন করেছে। বগুড়ার একদল শিক্ষার্থীরা এসবই মুগ্ধতায় এঁকে ইতিহাসের সাক্ষী রেখে গেছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর শিক্ষার্থীরা বগুড়া শহরেকে পরিস্কার করতে দেয়াল চিত্র অংকন, শহরের বিভিন্ন মোড়, পাড়া মহল্লা পরিস্কার করে। লুট হওয়া বিপনী বিতান, ভেঙ্গে যাওয়া ভবনের কাঁচ, আগুনে পোড়া বগুড়া সদর থানা এলাকাও পরিস্কার করে। ঝাড়– হাতে, পানি হাতে নিয়ে শিক্ষার্থীরা দিনব্যাপী কাজ করে। অপর একদল শিক্ষার্থীরা রোদে পুড়ে ট্রাফিক এর দায়িত্ব তুলে নিয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই ট্রাফিক এর দায়িত্ব পালন করছে। যানবাহন চলাচলে সার্বিক সহযোগিতা করছে। বগুড়া শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দাঁড়ালে এখন শিক্ষার্থীদের হাতের ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া দেয়াল আর ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় রংয়ের আল্পনা চোখে পড়ে। সড়ক পরিস্কার দেখা যায়। কদিন আগেও যে শহরে রাবার বুলেট আর টিয়ার শেলের আঘাতের কালচে দেয়ালে ফুটেছে রঙিনতা। যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে এই শহর। আগে কখনো এমন দেখা যায়নি।
বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায় দেয়ালে রং করতে আসা অনন্যা নামের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী জানান, তিনি নিজ তাগিদ থেকে এসেছেন। এই শহরে পোড়া দাগ রাখার চেয়ে এই শহরটাকে রঙিন করে তোলা দরকার। এই শহরে আন্দোলন হয়েছে। এখন তো সংস্কার করতে হবে। এখন একসাথে থাকতে হবে। তাই দেয়ালে থাকা গুলির দাগ তুলে দিয়েছি রঙের তুলিতে।
আশরাফুল নামের এক শিক্ষার্থী জানান, রাস্তা পরিস্কার করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা কাঁচের টুকরা হাতে লেগে আহত হয়েছে। তবুও আমরা থেমে থাকিনি। সড়ক থেকে ময়লা আবর্জনা ও কাঁচের টুকরা সরিয়ে নেব। সেই কাজ চলছে। কয়েকশ বৃক্ষরোপণও করা হয়েছে।
বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া মোড়ে ট্রাফিক এর দায়িত্ব পালন কারি বিএনসিসি, স্কাউট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষাথীরা জানান, সকালে এসে রাতে বাড়ি ফিরি। ক্লান্ত আছে। ঘুম কম। তবুও মনে হয় দেশের জন্য করছি। মানুষের জন্য করছি। তখন ক্লান্তি আসে না। নতুন করে স্বপ্ন জাগে মনে। তারা জানান, বগুড়া শহরের সকল মোড়েই শিক্ষার্থীরা নিজ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা কাউকে জোর করিনি। আমরা কাউকে বলিনি এই রোদে বা বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতে। তারা আগ্রহ দেখাচ্ছে। সেই হিসেবে কাজ চলছে।
বগুড়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারিরা বলছেন, সকলে মিলে নতুন করে দেশ গড়ার কাজে মনোযোগ দিতে হবে। কেউ বা কোন প্রতিষ্ঠান হামলার শিকার হলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কোন বাসা বাড়ি বা মন্দিরে যেন কেউ ক্ষতি করার চেষ্টাও না করতে পারে। সে বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
পথচারি আব্দুর রহীম জানান, কদিন আগেও দেয়ালে ধ্বংসের দাগ ছিলো। এখন সেখানে রঙিনতা লেগেছে। ছাত্ররা রং এর ছোঁয়ায় শহরের চেহারায় পরিবর্তন করে দিয়েছে। এখন বেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা দেখায়। এই তরুণরায় আগামী দিনে দেশ সুন্দর করে চালিয়ে নেবে।
দেয়ালে রং তুলির কাজ করতে আসা শিক্ষার্থীর অভিভাবক সীমা আইভি জানান, তার ভাগ্নি ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। বিজয় মিছিল করেছে। এরপর দেয়াল অঙকন ও ট্রাফিক এর দায়িত্ব পালন করার জন্য সে সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছে। তার উৎসাহ দেখে তিনিও ঝাড়– নিয়ে বের হয়ে সড়ক পরিস্কার করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/এএম