কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংস ঘটনায় হতাহতের শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গসহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন সংগঠনটির ১২ নেতা-কর্মী। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। তাদের অনেকেই সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সারা দেশে ১২ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি দলটির সহস্রাধিক নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন অনেকেই। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
নিহত ১২ জন হলেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী সবুজ আলী, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা নাজমুল হোসেন, ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা সুমন, গাজীপুর মহানগর শ্রমিক লীগের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা নূরে আলম, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত সহকারী ও যুবলীগ কর্মী হামিদুল ইসলাম জুয়েল মোল্লা, আওয়ামী লীগ কর্মী মো. নোমান, ঢাকা মহানগরী উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা বাকের মিয়া, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ জহিরুল ইসলাম টিপু, ঢাকা মহানগরী উত্তর আওয়ামী লীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা মো. বাবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা কবির, ঢাকা মহানগরী উত্তর যুবলীগের নেতা তানিম।
এদের মধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত সহকারী ও যুবলীগ কর্মী জুয়েল মোল্লার বাড়ি টঙ্গীর গাছা থানার চান্দুয়া গ্রামে। ছাত্রজীবনে টঙ্গী সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। হত্যাকান্ডের দিন ১৯ জুলাই অর্ধশতাধিক গাড়িতে দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীসহযোগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। পথিমধ্যে রাজধানীর উত্তরার হাউস বিল্ডিং এলাকায় তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। আন্দোলনকারীদের ইটের আঘাতে জাহাঙ্গীর আলমের মাথা ফেটে যায়। জুয়েল মোল্লাসহ বেশ কিছু নেতা-কর্মী প্রতিরোধের চেষ্টা করে মারধরের শিকার হন। আহত জুয়েলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার ওপর আবার হামলা হয়। এক পর্যায়ে তাকে গাছে ঝুলিয়ে পেটানো হয় এবং ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ ফেলে রাখা হয়। এ হামলায় গাজীপুর সিটি কাউন্সিলর মীর ওসমান গনি কাজল, কাউন্সিলর শিপু খানসহ আরও ৩০ জন আহত হন। জাহাঙ্গীর আলম বর্তমানে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের অঙ্গসহযোগী সংগঠন যুবলীগের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমান মাকসুদ গুরুতর আহত অবস্থায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন আছেন। যুবলীগের উপদপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন সাহজাদা বলেন, আহতদের তালিকা এখনো সম্পন্ন হয়নি। তবে সারা দেশে সংগঠনটির অগণিত নেতা-কর্মী হামলার শিকার হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই সংকটাপন্ন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ঢাকা মহানগরী উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৪৬ এবং দক্ষিণের ৫৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এদিকে সারা দেশে ছাত্রলীগের ২ শতাধিক নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ।