২০২০ সালে বতসোয়ানার ওকাভাঙ্গো ডেল্টায় রহস্যজনকভাবে অন্তত ৩৫০টি হাতি মারা যায়, যা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। চার বছর ধরে বিজ্ঞানীরা এই গণমৃত্যুর কারণ নিয়ে বিভ্রান্ত ছিলেন। তবে সম্প্রতি কিংস কলেজ লন্ডনের একটি গবেষণায় এর কারণ উদঘাটন হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ওই অঞ্চলের কিছু খোলা পানির উৎস সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা দূষিত হয়েছিল। এই ব্যাকটেরিয়া সায়ানোটক্সিন নামের বিষাক্ত রাসায়নিক উৎপন্ন করে, যা হাতিদের মৃত্যুর কারণ হয়।
গবেষণায় স্যাটেলাইট ডেটা ও স্থানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা যায়, প্রায় ৬,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অন্তত ২০টি পানির উৎস দূষিত ছিল। এসব পানির উৎস থেকে পানি পান করার পর হাতিরা গড়ে ১৬.৫ কিলোমিটার হেঁটে ৮৮ ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছে।
গবেষণা দলের প্রধান ডাভিদে লোমেও বলেন, আমাদের গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, মূলত মৌসুমি বৃষ্টিনির্ভর পুকুরগুলো সায়ানোটক্সিন সংক্রমণের উৎস ছিল। বড় নদী, লেক বা স্থায়ী জলাশয়গুলোর পানিতে এই বিষের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, মৃত হাতিগুলো ছিল বিভিন্ন বয়সের এবং তাদের দাঁত অক্ষত ছিল। তাই শিকার বা পয়জনিংয়ের সম্ভাবনা বিজ্ঞানীরা নাকচ করেছেন। পাশাপাশি, একটি বিমান জরিপে অন্য কোনো বন্যপ্রাণী বা গৃহপালিত প্রাণীর মৃতদেহ পাওয়া যায়নি।
সব ধরনের সায়ানোব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর নয়, তবে কিছু সায়ানোব্যাকটেরিয়া স্থির পানিতে মারাত্মক বিষাক্ত অ্যালগাল ব্লুম তৈরি করে। গবেষণায় জানা গেছে, ২০১৯ সালের দীর্ঘ শুষ্কতার পর ২০২০ সালের অতিবর্ষণের কারণে মাটির পুষ্টি এবং পলি জমাট বাঁধে, যা এই বিষাক্ত অ্যালগালের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
এই আবিষ্কার পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে। গবেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের দূষণ ঠেকাতে পানির উৎস পর্যবেক্ষণ এবং দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল