বাংলাদেশের জনগণের ওপর প্রায় ১২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার বিদেশি ঋণের বোঝা রেখে গেছে সাবেক শেখ হাসিনা সরকার। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় দেশে-বিদেশে ঋণের পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। ১৫ বছর পরে এ বছর জুন শেষে এই ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার বা ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হন। শেষ হয় শেখ হাসিনার টানা ১৫ বছরের শাসন আমল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। গত বুধবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৮ সাল শেষে সরকারের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দায়িত্ব নেয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। পরের পাঁচ বছরে সরকারের বৈদেশিক ঋণ বাড়ে ৬ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। এতে ২০১৩ সাল শেষে সরকারের বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪ সালে আবারও ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। এ মেয়াদে (২০১৪-২০১৮ সাল) দ্রুত হারে বেড়েছে বিদেশি ঋণ।
আগের পাঁচ বছরের চেয়ে ৬০ দশমিক ৬৮ শতাংশ বা ১৬ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ২০১৮ সাল শেষে স্থিতি দাঁড়ায় ৪৪ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। এরপর টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকারে থাকার সময়ে (২০১৯-২০২৩) বৈদেশিক ঋণ বাড়ে সবচেয়ে বেশি। এ সময় বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৩৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৭৯ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষে বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়ায় ৭৯ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। আগের পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৯ সালে বিদেশি ঋণ বাড়ে ৫ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে বাড়ে ৮ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছরের হিসাবে দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। পরের বছর তা ছাড়িয়ে যায় আগের হিসাবকে। ঋণ ছাড়ে গতিও আসে সে বছর। ২০২১ সালে মোট ঋণ নেওয়া হয় ৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ২০২২ সালে ৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৩ সালে সরকারের বিদেশি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার, যা বছরওয়ারি হিসাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ।