‘অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে’ বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সরকারের পারফরম্যান্স জাজ করার তো আমরা কেউ না। সরকার নিজের অ্যাসেসমেন্ট নিজেই করবে। দেশকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ফিরিয়ে নিতে আমরা তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা নির্বাচনের জন্য সময় বেঁধে দেওয়ার মতো কোনো চাপ সৃষ্টি করব না। তবে সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফেরানো। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অবশ্যই সংস্কার ও পরিবর্তন আনতে হবে। এ দুটিই চলমান প্রক্রিয়া। একসঙ্গে সবক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে হবে- এমনটি ভাবার কারণ নেই। যে ক্ষেত্রগুলোতে আমরা সবাই (সব রাজনৈতিক দল) একমত হতে পারব- সেসব ক্ষেত্রে এখন পরিবর্তন আনব। বাকি সংস্কারগুলো নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জনগণের কাছে যাবে। নির্বাচনের পর জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন বা সংস্কার করবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কাজ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচনি সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রফেশনাল ব্যক্তিদের নিয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। যারা দেশের মানুষের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকারের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা থাকবে না। বিএনপির দলীয় অবস্থান কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির অবস্থা অত্যন্ত ভালো। বিগত ১৫, ১৬ এমনকি ১৭ বছরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা গুম-খুনের শিকার হয়ে সব হারিয়ে, বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা, নির্যাতন-নিপীড়নের আগুনে পুড়ে একেকজন খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছেন। তাদের ত্যাগের মাধ্যমে দেশের সব মানুষকে নিয়ে সফল আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে নিয়ে যে সফলতা এসেছে, এতে তাদের বিশাল অবদান রয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে মানুষের অধিকার আদায়সহ রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক বোধ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ ত্যাগের পরই বোধ-এর সৃষ্টি হয়। বর্তমান বিএনপি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী দল। দলের ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সাড়ে ১৭ বছরে প্রায় ৪ লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে- এসব মামলা কীভাবে শেষ হবে বলে মনে করেন? এ ব্যাপারে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, এসব মামলা একসঙ্গে প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত। কারণ এ লোকগুলো মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় টানা ১৫ বছর সাফার করেছে। দুর্ভাগ্যবশত এখনো মামলাগুলো চলমান রয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। কারণ তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং বিশেষ অবদানের ফলেই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহারের ধীরগতি সম্পর্কে দলের স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, এই ভয়ানক স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তারপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বেগম খালেদা জিয়া নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৃত্যুকে উপেক্ষা করে দেশ ও মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের স্বার্থে আপসহীন নেত্রীর ভূমিকা পালন করেছেন। তারেক রহমান আজ ১৫/১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে নির্বাসনে থেকে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কষ্ট করে কাজ করে নির্দেশনা দিয়ে এ আন্দোলনকে সংগঠিত ও পরিচালিত করেছেন। যার সঙ্গে একীভূত হয়ে সব দল ও নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছেন। তাঁর মামলা এক দিন দেরি করলেও সেটা অনেক বেশি বিলম্বিত হবে বলে আমি মনে করি। কাজেই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত- কালবিলম্ব না করে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সব নেতা-কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে পতিত সরকারের আমলে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রত্যাহার করে নেওয়া।
‘তারেক রহমান কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন? তাঁর দেশে ফেরার ক্ষেত্রে মূল বাধাটা কোথায়?’ উত্তরে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, তিনি আইনি প্রক্রিয়ায় জামিন নিয়ে কিংবা মামলা শেষ করে দেশে ফিরে আসবেন। কারণ তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে এ সরকারের উচিত তাঁর সব মামলা দ্রুত শেষ করে ফেলা। ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের অবস্থা কী?’ জবাবে আমীর খসরু বলেন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই ভালো। বহির্বিশ্বের সবাই চাচ্ছেন যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। সুষ্ঠু পরিবেশে ব্যাপক বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। তারা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। বিভিন্ন খাতে সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, আমরা ছয় বছর আগেই সংস্কারের কথা বলেছি। এক বছর আগে আমরা ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। এটা বিএনপির অঙ্গীকার। এই ৩১ দফা বিএনপি যে করেই হোক বাস্তবায়ন করবে। জনস্বার্থে যদি নতুন আরও কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয়, তবে বিএনপি অবশ্যই সেটি করবে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।