সরকার পরিবর্তনের পর ভয়ংকর হয়ে উঠেছে রাতের সড়ক-মহাসড়ক। আগের মতো পুলিশি টহল না থাকার সুযোগ নিচ্ছে ছিনতাইকারী ও ডাকাতরা। বেড়েই চলেছে অপ্রত্যাশিত ঘটনা। ঘটছে হতাহতের ঘটনাও। চলমান এ ভীতিকর পরিস্থিতিতে এসব দুর্বৃত্তের লাগাম টানতে বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেসব এলাকায় ঘটনা ঘটবে সেসব এলাকার ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও হাইওয়ে পুলিশের দাবি, কোনো ধরনের ছেদ পড়েনি তাদের কর্মযজ্ঞে।
পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না দাবি করে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) ইসরাইল হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে মোহাম্মদপুরে এবং আলাদাভাবে জেনেভা ক্যাম্পে ব্লক রেইড দিয়ে আসামি গ্রেপ্তার করেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওসি এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জবাবদিহির মধ্যে রাখতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এগুলো অবশ্য
পুলিশের নিয়মেরই অংশ।’ পুলিশের একাধিক সূত্র বলছেন, বেশির ভাগ ছিনতাই-ডাকাতি ঘটছে মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত। গত দুই মাসে যেসব ছিনতাই ঘটেছে সবই এ সময়ের মধ্যে। এর মধ্যে ডাকাতির ঘটনা বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, সড়ক, বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তারা বেশি হানা দিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংকের গ্রাহকদেরও টার্গেট করে। আর ভোরের দিকে বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও নিরিবিলি-অনেকটা বিদ্যুৎহীন অন্ধকার সড়কে রিকশাযাত্রীদের নিশানা বানিয়েছে ছিনতাইকারীরা।
ডিএমপির তৈরি করা ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী ছিনতাইকারী বেশি রমনা, শাহবাগ, মোহাম্মদপুর, ভাটারা, বাড্ডা, শেরেবাংলানগর, হাজারীবাগ, তেজগাঁও, হাতিরঝিল, মিরপুর, পল্লবী, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত ও উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায়। এসব অপরাধে জড়িতদের পূর্ণাঙ্গ বৃত্তান্তও রয়েছে। পুলিশ মাঠ পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানতে পেরেছে, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ছিনতাইকারী ও ডাকাত রয়েছে তেজগাঁও বিভাগে। সবচেয়ে কম মিরপুর বিভাগে। থানার তথ্য বলছে, সবচেয়ে বেশি ছিনতাইকারী ও ডাকাত রয়েছে শাহবাগ, ভাটারা ও শেরেবাংলানগর থানা এলাকায়। আর সবচেয়ে কম ছিনতাইকারী ও ডাকাতের নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে দক্ষিণখান, উত্তরখান ও উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায়। পুলিশ বলছে, গত দুই মাসে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই-ডাকাতি বেড়েছে। ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন এলাকায় টহল বাড়ানো হয়েছে। ঢাকার প্রতিটি থানার ওসিকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। ছিনতাই-ডাকাতি প্রতিরোধে বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যে এলাকায় ছিনতাই-ডাকাতি হবে সে এলাকার ওসিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিএমপিসূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে একটি পূজাম পের পাশে এক নারীর গলার স্বর্ণের চেইন ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে। একই সময়ে ওই এলাকায় পূজাম পে পেট্রলবোমা হামলা ঘটে। দুই ঘটনা তদন্তে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতনরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। গভীর রাত পর্যন্ত ঘটনার তদন্ত চলে। পর দিন এ নিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্গাপূজার পর দেশে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবে। অপরাধী যে-ই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। অপরাধ করলে কারও পার পাওয়ার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক পরিচয় দিলেও কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
এর পরদিন শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর তিনরাস্তা মোড়ের কাছে একটি বাড়িতে সেনাবাহিনী ও র্যাবের পোশাক পরে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল একটি বাসায় ঢুকে ৭৫ লাখ টাকা ও ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে। বাড়িটি আবু বকর নামে এক ব্যবসায়ীর। যদিও এরই মধ্যে পুলিশ এবং র্যাব ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে। এদের ছয়জন বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য।
এদিকে ৫ ও ১৩ অক্টোবর রাতে সরেজমিনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের কোনো পেট্রল দেখা যায়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে এবং কিশোরগঞ্জের ভৈরব, নরসিংদীর ইটাখোলাসহ বিভিন্ন স্থানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলে সেখানে কোনো পুলিশের দেখা মেলেনি। এ বিষয়ে স্থানীয়দের বক্তব্য ছিল, ৫ আগস্টের পর থেকে পুলিশের মধ্যে এখনো নিষ্ক্রিয়তা কাটেনি। এ বিষয়ে গতকাল কথা হয় হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক শ্যামল কুমার মুখার্জির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘৩৩টি রুটে আমাদের ৮৫টি টহল টিম চালু রয়েছে। মহাসড়ক সচল রাখতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। আমাদের ১০টি স্থাপনা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হলেও অল্প সময়ের ব্যবধানে আমরা সেগুলো চালু করেছি।’ পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) ইনামুল হক বলেন, ‘ইতোমধ্যে আইজি স্যার ঘোষণা দিয়েছেন বিশেষ অভিযানের। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছি।’