চার দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার পর সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় এসে পৌঁছান তিনি। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হোর্তাকে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় বিমানবন্দরে পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা দেওয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন জোসে রামোস হোর্তা। তার সফরে অফিসিয়াল এবং কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি হবে। এ ছাড়া তার সফরকালে ঢাকায় পূর্ব তিমুরের অনারারি কনস্যুলেট খোলার বিষয়ে ঘোষণা আসবে। খসড়া সূচি অনুযায়ী, আজ (১৫ ডিসেম্বর) সকালে পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। পরে দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন প্রেসিডেন্ট হোর্তা। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দুই শীর্ষ নেতা একান্তে কিছু সময় আলাপ করবেন। পরে প্রতিনিধিদল নিয়ে বৈঠকে বসবেন ইউনূস-হোর্তা। বৈঠক শেষে তারা যৌথ প্রেস কনফারেন্স করবেন। এর পর দুই শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি ও ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই হবে। সফরের তৃতীয় দিন সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) প্রেসিডেন্ট হোর্তা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এদিন তিনি সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন।
তিনি বাংলাদেশের ৫৪তম বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন।
প্রেসিডেন্ট হোর্তা ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএস) অডিটরিয়ামে ‘দ্য চ্যালেঞ্জেস অব পিস ইন দ্য কনটেম্পোরারি ওয়ার্ল্ড-শীর্ষক থিমের ওপর বক্তব্য দেবেন। পরে তিনি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও তরুণ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন।
একই দিন বিকালে তিনি বাংলাদেশের ছাত্র এবং তরুণদের উদ্দেশ্যে তার দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অভিজ্ঞতা, তার নেতৃত্ব, দীর্ঘ সংগ্রামে জনগণের ভূমিকা ও স্বাধীনতা-পরবর্তী তিমুর লেস্তের জনগণের আকাক্সক্ষা ও তার বাস্তবায়ন সম্পর্কে বক্তব্য রাখবেন।
পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টের সফর নিয়ে গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টের সফরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। অফিসিয়াল এবং কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তি। আর দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় পরামর্শমূলক ব্যবস্থাপ্রতিষ্ঠা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ও তিমুর লেস্তের মধ্যে সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো হিসেবে খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, কৃষি, চুক্তিভিত্তিক চাষাবাদ, প্রাণিসম্পদ ও প্রাণিচিকিৎসা, গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিকার, তথ্য প্রযুক্তি, পর্যটন, দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা ও স্থায়ী নাগরিকত্ব প্রদান এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়সমূহ বিশদ আলোচনা হবে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনসহ বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হবে। তিনি আরও বলেন, এর বাইরে ছাত্রবিনিময়, শিক্ষকবিনিময়, যৌথ গবেষণা প্রকল্প এবং যৌথ মাস্টার্স এবং ডক্টরাল প্রোগ্রামের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার আদান-প্রদানে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে।