ফুটবলে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ৩০ বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। এখানে জয়ের দিক দিয়ে ভারত এখনো অনেক এগিয়ে। ১৩ ম্যাচ জিতেছে তারা। ১৩টি ড্র আর চার ম্যাচে জয়লাভ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় দল। যার শেষটি এসেছে মঙ্গলবার ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে। এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ফিরতি ম্যাচে শেখ মোরসালিনের গোলে ২২ বছর পর জয়ের তৃষ্ণা মিটেছে। সেই জয় নিয়ে এখনো চলছে উৎসব। দুই দেশের ম্যাচের সূচনা হয়েছিল ১৯৭৮ সালে থাইল্যান্ড এশিয়ান গেমসে। তবে ১৯৮৫ সালে সাফ গেমসের ফাইনাল দিয়েই দুই দেশের ফুটবল লড়াই উত্তেজনায় রূপ নেয়। এখন সেই উন্মাদনা ক্রিকেটকেও ছাড়িয়ে গেছে। পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙার পর সামনে বাংলাদেশ-ভারত ফুটবল ম্যাচে উত্তেজনা আরও বাড়বে, এ নিয়ে সন্দেহ নেই। একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে, ১৯৯১ কলম্বো সাফ গেমস ছাড়া পরের তিন ম্যাচে বাংলাদেশের জয় এসেছে বিদেশি কোচের প্রশিক্ষণে। ১৯৮৪ সালে প্রথমবার নেপালে সাফ গেমস শুরু হয়। সেবার ভারত ফুটবল ইভেন্টে অংশ না নেওয়ায় ধরে নেওয়া হয়েছিল ফুটবলের সোনা বাংলাদেশের ফুটবলারদের গলায় ঝুলবে। অথচ রৌপ্য নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। সাফ গেমস এলেই বাংলাদেশকে ফেবারিট ধরা হতো। অথচ সেই সোনা জিততে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১৫ বছর। স্বপ্ন পূরণ হয় সেই কাঠমান্ডুতেই, নেপালকে হারিয়েই বাংলাদেশ প্রথম সোনা জেতে। সেমিফাইনালে হারায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে। টিপুর সেই দর্শনীয় গোল এখনো চোখে ভাসে। ইরাকের সামির সাকিরের প্রশিক্ষণেই ভারতকে হারায় বাংলাদেশ। এরপর ২০০৩ সালে ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও একই অবস্থা। অস্ট্রিয়ার কোচ জর্জ কোটারের প্রশিক্ষণে সেমিফাইনালে ভারতকে ২-১ গোলে হারায়। আর এটিই ছিল ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়। তখন নিয়ম ছিল নির্ধারিত সময়ে ফল নিষ্পত্তি না হলে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে গড়াবে। যদি কেউ গোল করে তাহলেই জিতে যাবে। বাকি সময়ে আর খেলা হবে না। সেই গোলকে ফিফা নাম দিয়েছিল গোল্ডেন গোল। মতিউর মুন্নার সেই গোল্ডেন গোল সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। এরপর দীর্ঘ ২২ বছরের অপেক্ষা। সেমিফাইনাল বা ফাইনালও নয়। মঙ্গলবার ভারতের বিপক্ষে জয়টি দক্ষিণ এশিয়াকেও কাঁপিয়ে দিয়েছে। কোচ ছিলেন স্পেনের হাভিয়ের কাবরেরা। তিন বিদেশি কোচের অধীনে মূল্যবান জয় এলেও মূল্যায়ন করা হয়নি সামির সাকির ও জর্জ কোটানকে। তাদের বিদায় জানানো হয়েছিল করুণভাবে। কোটানকে তো ল্যাপটপ চোর বলা হয়েছিল। বাংলাদেশের ফুটবলে বরাবরই এমনটিই ঘটে। হাভিয়ের কাবরেরার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে চলতি বছরেই। তাকে রাখা হবে কি না বা তিনি থাকবেন কি না তা অপেক্ষায় থাকতে হবে। বিদায় নিলে যেন অতীতের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেটাই লক্ষ্য রাখতে হবে।