টেস্টের প্রথম দিন প্রেসিডেন্ট বক্সে বসে খেলা দেখেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। পরিচালকদের নিয়ে অপেক্ষা করেন শততম টেস্টে মুশফিকের সেঞ্চুরির। সেঞ্চুরি না হওয়ায় আক্ষেপ নিয়ে দিন শেষ করেন বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরিম্যান বুলবুল। গতকাল সকালেই হাজির হন মিরপুর স্টেডিয়ামে মুশফিকের সেঞ্চুরির মধুর ক্ষণটি উপভোগ করতে। গতকাল মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০তম টেস্টে সেঞ্চুরি করে ইতিহাসের সোনালি পাতায় চিরস্থায়ী হয়েছেন। মুশফিকের সেঞ্চুরিতে বাধভাঙা উচ্ছ্বাস করেছেন বিসিবি সভাপতি। শুধু বুলবুল কেন, মুশফিকের সেঞ্চুরির অপেক্ষায় ছিলেন বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা। তাদের অপেক্ষায় জল ঢালেননি ৩৮ বছর বয়সি ক্রিকেটার। সেঞ্চুরি করে নিজের নাম লেখেন ১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসের বিরল ক্লাবে। টেস্ট ক্রিকেটের ৮৪তম সদস্য হিসেবে শততম টেস্ট খেলেন এবং ১১ নম্বর ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করেন। ইতিহাস লেখার টেস্টে মুশফিক বিস্মিত হয়েছেন ফুটবলার হামজা চৌধুরীর মেসেজে, ‘হামজার মেসেজে আমি বিস্মিত হলেও মুগ্ধ। যদি কোনোদিন দেখা হয়, সেদিন ধন্যবাদ জানাব তাকে।’
২০ বছরের লম্বা ক্যারিয়ার। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলেছেন। বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার ১০০ টেস্ট খেলছেন, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ইতিহাস লেখা মুশফিকের, ‘আমি আসলে বিশ্বাস করতে পারছি না, বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার ১০০ টেস্ট খেলছেন। দেশের ক্রিকেটের জন্য এটা অনেক বড় একটা প্রাপ্তি। আমি খেলেছি বলে নয়, পৃথিবীর যে দেশের যে কোনো ক্রিকেটারের জন্যই এটা অনেক বড় বিষয়।’ ২০০৫ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক মুশফিকের। এখনো খেলছেন। এই লম্বা ক্যারিয়ারে মুশফিক টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ খেলেছেন। অধিনায়কত্ব করেছেন তিন ফরম্যাটে। তিন ফরম্যাটের মধ্যে আলাদা করে বেছে নিতে বললে টেস্ট ক্রিকেটকেই বেছে নেবেন বলতে কার্পণ্য করেননি শততম টেস্টে সেঞ্চুরিম্যান মুশফিক, ‘সত্যি বলতে আমার কখনো স্বপ্ন ছিল না বাংলাদেশের হয়ে ১০০ টেস্ট খেলব। কিন্তু এটা সত্যি যে, আমি বহুবার বলেছি, যদি একটি ফরম্যাটকে বেছে নিতে হয়, তাহলে আমি টেস্টকে বেছে নেব। আমি যতদিন পারব চেষ্টা করব টেস্ট খেলে যেতে। সবার শেষে আমি টেস্ট ক্রিকেটটা ছাড়তে চাই।’
প্রথম দিন সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও মুশফিক অপরাজিত ছিলেন ৯৯ রানে। যা তার ক্যারিয়ারের প্রথমবার। মুহূর্তটা ছিল রোমাঞ্চকর, ’৯৯ রানে অপরাজিত থাকার পরও আমি চেষ্টা করেছি নতুন করে শিখতে। কেননা গত ২০ বছরের ক্যারিয়ারে আমি কখনো ৯৯ রানে অপরাজিত ছিলাম না। এটা ছিল আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। সত্যি বলতে, মুহূর্তর্টি আমি উপভোগ করেছি।’
১৪৮ বছরে টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে মাত্র ৮৪ ক্রিকেটার ১০০ টেস্ট খেলেছেন। সেঞ্চুরি করেছেন ১১ ক্রিকেটার। মুশফিকের আগে সেঞ্চুরি করেছেন শততম টেস্টে কলিন কাউড্রে, জাভেদ মিয়াদাদ, গর্ডন গ্রিনিজ, অ্যালেক স্টুয়ার্ট, ইনজামাম-উল-হক, রিকি পন্টিং, গ্রায়েম স্মিথ, হাশিম আমলা, জো রুট ও ডেভিড ওয়ার্নার। মুশফিক এখন তাদের সঙ্গে সমুচ্চারিত নাম। অথচ শততম টেস্টটি নিয়ে আলাদা কোনো পরিকল্পনার কথা বলেননি। তার কাছে ব্যক্তি নয়, দল আগে, ‘প্রত্যেটা ম্যাচেই আমার চেষ্টা থাকে সেরাটা দেওয়ার। চেষ্টা করি নিজের সর্বোচ্চ দিতে। ম্যাচ শুরুর আগে বলেছিলাম, হার্ডলে ১০০ ম্যাচ হোক, কিংবা অন্য কোনো মাইলস্টোন হোক, বাংলাদেশ সব সময় আমার কাছে সবার আগে ’
মুশফিক ২০ বছর ক্রিকেট খেলছেন। দলের যে কোনো ক্রিকেটারের চেয়ে বেশি অনুশীলন করেন। যে কোনো ক্রিকেটারের চেয়ে আগে আসেন অনুশীলনে। এই সময়টুকু দেওয়ার জন্য তিনি স্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, ‘আমার মনে হয় সবচেয়ে বেশি সেক্রিফাইস ও সমর্থন করেছে আমার স্ত্রী। আমি যে সবচেয়ে বেশি সময় অনুশীলন করি, এটা কখনোই হতো না, যদি আমার স্ত্রীর সম্মতি না থাকত।’ বয়স ৩৮। আরও কতদিন খেলবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে মুশফিক বলেন, ‘আমি আমার ফিটনেস ও স্কিল নিয়ে সন্তুষ্ট। তার পরও আমি মনে করি অবশ্যই আমাকে আরও উন্নতি করতে হবে। উন্নতির জায়গাটা আমি জানি এবং আমি সেটা চেষ্টা করে যাব। বাংলাদেশের হয়ে প্রত্যেকটা টেস্ট আমার জন্য অনেক স্পেশাল।’
আরও আশা থাকবে যতটুকু পারি কন্ট্রিবিউট করতে। যতদিন টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে চাইবে এবং নিজের ভিতর থেকে আমি অনুভব করব দলে থাকা দরকার আছে, ততদিন পর্যন্ত আমার খেলার ইচ্ছা আছে।’ শততম টেস্টে সেঞ্চুরি। বিশেষ মুহূর্ত। তার পরও সবচেয়ে সুখকর মুহূর্ত বলেছেন গল টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিকে, ‘জীবনে প্রতিটি টেস্টই স্পেশাল। ১০০ টেস্ট খেলা যে কোনো ক্রিকেটারের জন্যই আলাদা। সেঞ্চুরিও অন্যরকম বিষয়। তবে গল টেস্টে ২০০ রানের ইনিংসটি আমার কাছে বিশেষ কিছু। দিন শেষে শততম টেস্ট সেঞ্চুরিটিকে দাদা-দাদি ও নানা-নানিকে উৎসর্গ করেন মুশফিক, ‘আমি এই মুহূর্তটি আমার দাদা-দাদি ও নানা-নানিকে উৎসর্গ করেছি।