লেটার মার্কস নয়, মিরপুর টেস্টে পুরোপুরি ১০০ পেয়েছেন মুশফিকুর রহিম। মুশফিক বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার, ১০০ টেস্ট খেলেছেন। শুধু খেলেই থেমে থাকেননি, শততম টেস্টকে রাঙিয়েছেন ৩ অঙ্কের জাদুকরী ইনিংসে। তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি রয়েছে ক্যারিয়ারে। তার পরও শততম টেস্টে ১০৬ রানের ইনিংসটি মুশফিককে চিরস্থায়ী করেছে ১৪৮ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসের অভিজাত শ্রেণিতে।
শচীন টেন্ডুলকার ক্যারিয়ারে টেস্ট খেলেছেন ২০০টি। সেঞ্চুরি ৫১টি। তারপরও ক্রিকেট কিংবদন্তি টেন্ডুলকারের আক্ষেপ শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করতে না পারার। ব্রায়ান লারা ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে শৈল্পিক ক্রিকেটার। লারা একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি টেস্টে ৪০০ রানের অতিমানবীয় এক ইনিংস খেলছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫০১ রান করেছেন এক ইনিংসে। টেন্ডুলকারের মতো লারারও শততম টেস্টে সেঞ্চুরি নেই। শততম টেস্টে সেঞ্চুরি নেই জ্যাক ক্যালিস, কুমার সাঙ্গাকারা, রাহুল দ্রাবিড়দের মতো কিংবদন্তির ক্রিকেটারদের। এ এক জায়গায় মুশফিকুর রহিম এসব তারকা ক্রিকেটারদের পেছনে ফেলেছেন। নিজেকে নিয়ে গেছেন আকাশসমান উচ্চতায়। ১৪৮ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ১১ নম্বর ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ারের ১০০তম টেস্টে সেঞ্চুরি করে বিরল ক্লাবে নাম লিখেছেন মুশফিক। মুশফিকের ১০০-তে ১০০ করার টেস্টে দ্বিতীয় দিন সেঞ্চুরি করেছেন লিটন দাস। ১২৮ রানের ইনিংস খেলার পথে ৩ হাজারি ক্লাবে নাম লিখেছেন লিটন। মুশফিক ও লিটনের জোড়া সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪৭৬ রান। পর্বতসমান স্কোরের নিচে চাপা পড়েছে সফরকারী আয়ারল্যান্ড। ৯৮ রান তুলতে ৫ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে গেছে সফরকারীরা।
মুশফিকের আগে আরও ১০ ক্রিকেটার নিজেদের ১০০তম টেস্টে সেঞ্চুরি করেন। তাদের সেঞ্চুরি সংখ্যা ১১টি। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করেন ইংল্যান্ডের কলিন কাউড্রে। ১৯৬৮ সালে বার্মিংহামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০৪ রান করেছিলেন। দ্বিতীয় ক্রিকেটার শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করেন পাকিস্তানের জাভেদ মিয়াদাদ। ১৯৮৯ সালে লাহোরে ভারতের বিপক্ষে করেছিলেন ১৪৫ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের গর্ডন গ্রিনিজ ১৯৯০ সালে সেন্ট জোন্সে ১৪৯ রান করেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের অ্যালেক স্টুয়ার্ট ২০০০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৫, পাকিস্তানের ইনজামাম-উল হক ২০০৫ সালে ভারতের বিপক্ষে বেঙ্গালুরুতে ১৮৪ রান করেন। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং শততম টেস্টের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন। ২০০৬ সালে সিডনিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১২০ ও ১৪৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওভালে ১৩১, আরেক প্রোটিয়া ক্রিকেটার হাশিম আমলা ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জোহানেসবার্গে ১৩৪ রান করেন। শততম টেস্টে দুজন ক্রিকেটার জো রুট ও ডেভিড ওয়ার্নার ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। ইংলিশ ক্রিকেটার রুট ২০২১ সালে ভারতের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে ২২১ রান ও অসি ক্রিকেটার ওয়ার্নার ২০২২ সালে মেলবোর্নে ২০০ রান করেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সর্বশেষ এ ক্লাবে নাম লেখানো ক্রিকেটার বাংলাদেশের মুশফিক। মিরপুরে ১০৬ রান করেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে।
আশ্চর্য হলেও সত্যি, ভারত ও শ্রীলঙ্কার কোনো ক্রিকেটারের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি নেই।
টেস্টের প্রথম দিন ৯৯ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। গতকাল শুরুর দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে তুলে নেন স্বপ্নের সেঞ্চুরি। আইরিশ পেসার জর্দান নেইলের মিডল স্টাম্পের বলটিকে কবজির মোচরে শর্ট স্কয়ার লেগে ঠেলে দ্রুত স্থান বদল করে লেখেন সোনালি ইতিহাস। বুধবার ব্যাটিংয়ে নামেন ৯৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর। এরপর সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হকের সঙ্গে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১০৭ রান করেন। মুমিনুলের বিদায়ের পর দিন পার করেছিলেন লিটন দাসকে নিয়ে ৯০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে। পঞ্চম উইকেটে লিটনকে নিয়ে ১০৭ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন। দিনের দ্বিতীয় ওভারে সেঞ্চুরি তুলে মুশফিক আউট হন ১০৬ রানে। এটা তার ১৩ নম্বর সেঞ্চুরি। যুগ্মভাবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। মুমিনুলের সেঞ্চুরি ৭৫ টেস্টে ১৩টি। মুশফিক স্বপ্নের সেঞ্চুরিটি করেন ১৯৫ বলে ৫ চারে। ১০৬ রানের ইনিংসটি খেলেন ২১৪ বলে ৫ চারে। লিটন ১২৮ রান করেন ১৯২ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায়। যা টি-২০ অধিনায়কের ৫২ টেস্টে পঞ্চম সেঞ্চুরি।