ভবিষ্যতে চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে গুহা ও লাভার বিভিন্ন সুরঙ্গ খুঁজে পাওয়ার বিষয়টিকে আরও সহজ করবে নাসার ক্ষুদে রোবট রিচবট। ‘সায়েন্স রোবোটিক্স’-এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র গবেষকদের একটি দল ‘রিচবট’ নামের এক অভিনব ক্ষুদে রোবোটের নানা সম্ভাবনাময় ব্যবহার খতিয়ে দেখেছেন।
যেখানে ভবিষ্যতে চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে থাকা গভীর গুহা ও লাভার বিভিন্ন সুরঙ্গ খুঁজে পেতে রিচবট রোবটের বিশেষ ধরনের যান্ত্রিক নকশা ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট ইউনিভার্স টুডে।
এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি’র মাইক্রোরোবোটিক্স ল্যাবরেটরি’র পোস্টডক্টরাল রিসার্চ ফেলো ড. টনি চেন বলেছেন, “নাসার ‘এনআইএসি (নাসা ইনোভেটিভ অ্যাডভান্সড কনসেপ্টস)’ প্রকল্পের আওতায় রিচবটের কাজ শুরু হয়, যেখানে সুদূরপ্রসারী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রযুক্তির বিকাশের উপর মনোযোগ দেন গবেষকরা।”
“এ রোবটটি বানানোর পেছনের মূল কারণ, বিভিন্ন গ্রহে থাকা নানা গর্ত, গুহা ও লাভার সুরঙ্গের মতো প্রতিকূল পরিবেশের জন্য উপযোগী এমন এক রোবট তৈরি, যা বিস্ময়কর বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান ও অগ্রগতিতে সহায়তা করবে।”
রিচবটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সবচেয়ে ভাল উপায়ে কাজ করার জন্য অ্যালগরিদমের একটি সিরিজের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে এই রোবট, যা পিভটিং বা সুষম বাহু ও বিভিন্ন গ্রিপারের সঙ্গে নিজের প্রসারিত বিভিন্ন অঙ্গ ব্যবহার করে অসম আকৃতির শিলা বা পাথরের মতো কঠিন ভূখণ্ডের ওপরে চলাচল করতে পারে।
এ সুবিধাটি জমাট লাভার সুরঙ্গ বা গুহার মতো বদ্ধ স্থানের মধ্যদিয়ে ঠিকভাবে চলাচলের সময় নানা উপায়ে রোবটের দেহের আকার পরিবর্তন করতে সহায়তা করে। মঙ্গল গ্রহের ‘মার্শান’ নামের লাভার সুরঙ্গে ব্যবহারের জন্য রিচবট রোবটের ধারণাটি নিয়ে ২০২১ সালের একটি গবেষণায় আলোচনা করা হয়েছে।
এ গবেষণার জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার মোহাভি মরুভূমির লাভিক লেক আগ্নেয়গিরির ক্ষেত্রে লাভার সুরঙ্গের মধ্যে রিচবটের সক্ষমতার বিষয়টি পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা। যার মধ্যে ভবিষ্যতে রিচবট রোবটটি কীভাবে কাজ করবে সে বিষয়টিও পরীক্ষা করা হয়েছে।
এমনকি পাথরের উপর দিয়ে চলাচলের সময় রোবটটি কীভাবে পাথুরে পৃষ্ঠ শনাক্ত করেছে ও কোন পথ নিয়েছে বা কীভাবে রিচবট নিজের বাড়তি অঙ্গ ব্যবহার করে লাভার সুরঙ্গের মধ্যে কাজ করেছে তাও খতিয়ে দেখেন গবেষকরা। যা চরম পরিস্থিতিতেও রোবটের চলাচলের সক্ষমতাকে প্রকাশ করে। শেষ পর্যন্ত গবেষকরা রিচবটের জন্য সম্ভাব্য বাড়তি সুবিধার বিস্তৃত পরিসর খুঁজে পান।
ড. চেন বলেছেন, “মোহাভি মরুভূমিতে থাকা বিভিন্ন লাভার সুরঙ্গের সঙ্গে মঙ্গল গ্রহের লাভার সুরঙ্গের মিল থাকায় এ জায়গাটিকে বেছে নেওয়া হয়। যেটি প্রতিকূল পরিবেশে কীভাবে রিচবট রোবটকে পাঠানো যায় ও এর বিভিন্ন সাবসিস্টেম কীভাবে বাস্তবসম্মত পরিবেশে কাজ করতে পারে তা খতিয়ে দেখতে সহায়তা করেছে।”
নাসা’র ‘লুনার রিকনিসেন্স অরবিটার (এলআরও)’-এর মাধ্যমে প্রাপ্ত রেডার ডেটা ব্যবহার করে ইতালির ‘ট্রেন্টো ইউনিভার্সিটি’র নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল সফলভাবে চাঁদের ‘ম্যারে ট্রাঙ্কুইলিটাটিস পিট (এমটিপি)’-এ থাকা একটি লাভার সুরঙ্গের স্কাইলাইট প্রবেশদ্বারের থ্রিডি মানচিত্র তৈরি করেছে।
গবেষণা দলটির দাবি, এ লাভা সুরঙ্গ প্রায় দশ মিটার দৈর্ঘ্যের ও স্কাইলাইটটি নিজেই প্রায় ১০০ মিটার ব্যাসের হতে পারে। ভবিষ্যতে নভোচারীদের সৌর ও মহাজাগতিক বিকিরণ থেকে রক্ষা করতে পারে এ ধরনের লাভার বিভিন্ন সুরঙ্গ। যা ধারাবাহিকভাবে চাঁদের পৃষ্ঠকে বিস্ফোরিত করে চলেছে। আর এইভাবেই চাঁদে দীর্ঘমেয়াদী মানব অনুসন্ধানের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে রিচবট।
সূত্র- ইউনিভার্স টুডে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ