নাসা অবশেষে তাদের ইনজেনুইটি হেলিকপ্টার মঙ্গলের পৃষ্ঠে কেন বিধ্বস্ত হয়েছিল তা প্রকাশ করেছে। নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি (জেপিএল) এবং অ্যারোভাইরোনমেন্টের প্রকৌশলীদের গভীর পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, ইনজেনুইটির নেভিগেশন সিস্টেম নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
মিশন ডেটা অনুযায়ী, ইনজেনুইটি ১২ মিটার উচ্চতায় উঠে ছবি তুলেছিল এবং ৩২ সেকেন্ড পরে মঙ্গলের পৃষ্ঠে ফিরে আসে। কিন্তু এরপর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যখন পৃথিবীর মিশন কমান্ড পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করে, তখন দেখা যায় যে ইনজেনুইটির রোটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইনজেনুইটির প্রথম পাইলট, হাভার্ড গ্রিপ, বলেন, ১০০ মিলিয়ন মাইল দূর থেকে দুর্ঘটনার তদন্ত চালাতে কোনো ব্ল্যাক বক্স বা প্রত্যক্ষদর্শী নেই। তবে ডেটার ভিত্তিতে আমাদের সবচেয়ে সম্ভাব্য কারণ হলো পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্যের অভাব, যা নেভিগেশন সিস্টেমের জন্য তথ্য সরবরাহে যথেষ্ট ছিল না।
ইনজেনুইটির নেভিগেশন সিস্টেম মঙ্গলের সমতল এবং ছোট ছোট পাথুরে এলাকায় ক্যামেরার মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল বৈশিষ্ট্য ট্র্যাক করার জন্য তৈরি। তবে সেই ফ্লাইটে এটি জেজেরো ক্রেটারের এমন একটি অঞ্চলে ছিল যেখানে পৃষ্ঠটি ঢেউখেলানো বালিতে ভরা এবং বৈশিষ্ট্যবিহীন। এই টপোগ্রাফি হেলিকপ্টারটিকে বিভ্রান্ত করে এবং কঠিন আঘাতের ফলে এটি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
দ্রুত অবস্থান পরিবর্তনের কারণে রোটর ব্লেডের উপর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি চাপ পড়ে। এতে চারটি ব্লেডই তাদের দুর্বল স্থানে ভেঙে যায়, যা ব্লেডের ডগা থেকে এক-তৃতীয়াংশ দূরে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্লেডগুলোর কারণে অতিরিক্ত কম্পন তৈরি হয় এবং একটি ব্লেড সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর ফলে অতিরিক্ত শক্তির চাহিদা সৃষ্টি হয় এবং যোগাযোগের সম্পূর্ণ ক্ষতি ঘটে।
এই বিশ্লেষণ নাসার পরবর্তী মিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছে। প্রকৌশলীরা ভবিষ্যতের জন্য আরও উন্নত নেভিগেশন সিস্টেম এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছেন।
নাসার ইনজেনুইটি হেলিকপ্টার মঙ্গলের মাটিতে প্রথম উড্ডয়নকারী যন্ত্র হিসেবে একটি মাইলফলক স্থাপন করেছিল। তবে এই দুর্ঘটনা তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে রইল এবং নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নে এটি সহায়ক হবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল