থাইল্যান্ডে ৪,০০০ বছর আগের এক নারীর দাঁতের প্লাকে (দাঁতের কঠিন আবরণে জমে থাকা খনিজ পদার্থ) পান সেবনের রাসায়নিক প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা। এই আবিষ্কার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পান-সেবনের সবচেয়ে প্রাচীন ও সরাসরি প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ওই নারীর দাঁতে পান সুপারি সেবনের রাসায়নিক চিহ্ন পাওয়া গেছে—যা পূর্বে পাওয়া প্রমাণের চেয়ে অন্তত এক হাজার বছর পুরোনো। থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ পিয়াওয়িত মুনখাম বলেন, দৃশ্যমান দাগ বা গাছের টুকরার মতো প্রমাণ ছাড়াও দাঁতের ক্ষুদ্র প্লাক বিশ্লেষণ করে অতীতের বহু অজানা তথ্য বের করা সম্ভব।
গবেষকরা থাইল্যান্ডের কেন্দ্রে অবস্থিত প্রাগৈতিহাসিক কবরস্থান নং রাতচাওয়াত থেকে ২০২১ সালে ছয় ব্যক্তির দাঁতের ৩৬টি নমুনা সংগ্রহ করেন। এরপর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি লিকুইড ক্রোমাটোগ্রাফি-ম্যাস স্পেকট্রোমেট্রি (LC-MS) ব্যবহার করে গবেষণাটি সম্পন্ন হয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দাঁতের প্লাকে আটকে থাকা রাসায়নিক যৌগ বিশ্লেষণ করা হয়।
বিশ্লেষণে ‘বুরিয়াল ১১’ নামে পরিচিত একজন নারীর দাঁত থেকে সুপারির প্রধান সক্রিয় উপাদান আরেকোলিন ও আরেকাইডিন শনাক্ত হয়। গবেষকদের মতে, এ ধরনের অত্যন্ত সংবেদনশীল পরীক্ষা আগে কখনো প্রত্নতত্ত্ব গবেষণায় ব্যবহৃত হয়নি।
গবেষণায় ব্যবহার করা হয় আধুনিক সময়ের পান তৈরির অনুকরণে প্রস্তুতকৃত কিছু নিয়ন্ত্রণ নমুনা—যার মধ্যে ছিল শুকনো সুপারি, চুন, পান পাতা, কখনও কখনও তামাক ও কাথের ছাল। এই উপাদানগুলো মানুষের লালা মিশিয়ে গুঁড়ো করে পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী গবেষক দলটি ছিল আন্তর্জাতিক। রাসায়নিক বিশ্লেষণটি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে।
বিভিন্ন সংস্কৃতিতে পান খাওয়ার প্রচলন অতিথি আপ্যায়ন ও ধর্মীয় রীতিনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদি পান খাওয়ার অভ্যাস মুখগহ্বর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তবুও গবেষকরা মনে করছেন, এই ঐতিহাসিক অভ্যাসের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বোঝা জরুরি।
গবেষক মুনখাম বলেন, শহরাঞ্চলে পান চিবানোর প্রবণতা কমে গেলেও থাইল্যান্ডের গ্রামাঞ্চলে এখনও তা দেখা যায়। তিনি জানান, তার নিজের দাদী-নানীও পরিবার-পরিজনের সঙ্গে গল্প করার সময় পান খেতেন, যা ছিল সামাজিক বন্ধনের একটি মাধ্যম।
গবেষকরা এখন পর্যন্ত ১৫৬টি কঙ্কাল উদ্ধার করেছেন ওই স্থান থেকে। তারা আশা করছেন, আরও অনেক নমুনা বিশ্লেষণ করে প্রাচীন সমাজে পান-সুপারির ধর্মীয়, সামাজিক ও চিকিৎসাগত গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।
এই গবেষণাপদ্ধতি শুধু পান নয়, বরং অন্যান্য প্রাচীন উদ্ভিদ বা খাদ্যজাত উপাদানের বিশ্লেষণেও ব্যবহৃত হতে পারে, যা অতীত সমাজের জীবনধারার নতুন জানালা খুলে দিতে পারে। সূত্র : সিএনএন
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল