হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বর্তমান চাকরির বাজারে অনেক ঐতিহ্যবাহী ডিগ্রি দ্রুত তাদের মূল্য হারাচ্ছে। এখন আর শুধু ডিগ্রি নয়—চাকরিদাতারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন কর্মীর দক্ষতা, অভিযোজনক্ষমতা (পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা) ও বাস্তবজ্ঞানকে।
কমছে যেসব ডিগ্রির চাহিদা
হার্ভার্ডের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আগের মতো এমবিএ বা ব্যবসায় প্রশাসন, কম্পিউটার সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, হিসাববিজ্ঞান কিংবা মানবিক বিষয়ে স্নাতকদের চাহিদা আর তেমন নেই। বাজারে এসব গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিতে এসব ডিগ্রির কার্যকারিতা কমছে।
হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের ২০২৫ সালের শুরুর দিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, এমবিএসহ সাধারণ ব্যবসায় প্রশাসনের শিক্ষার্থীরা আগের মতো উচ্চ বেতনের চাকরি পাচ্ছেন না। একইভাবে কম্পিউটার সায়েন্স ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো প্রযুক্তিনির্ভর ডিগ্রিতে শুরুতে ভালো আয় হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষতা অচল হয়ে পড়ছে।
অ্যাকাউন্টিং ক্ষেত্রেও অটোমেশন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে দীর্ঘমেয়াদে চাকরির সুযোগ কমছে। বায়োকেমিস্ট্রি ও সাইকোলজি (স্নাতক) পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্র সীমিত, আর ইতিহাস, দর্শন ও সামাজিক বিজ্ঞানের মতো বিষয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি।
বাড়ছে যেসব বিষয়ে চাহিদা
হার্ভার্ডের গবেষণা বলছে, ভবিষ্যতের চাকরির বাজারে টিকে থাকতে হলে একক ডিগ্রির ওপর নির্ভর না করে বহুমুখী দক্ষতা অর্জন জরুরি। বিশেষ করে প্রযুক্তি জ্ঞান, ডেটা বিশ্লেষণ, সৃজনশীলতা এবং সামাজিক বুদ্ধিমত্তা মিলিয়ে যারা নিজেদের তৈরি করতে পারবে, তাদের সুযোগ সবচেয়ে বেশি থাকবে।
হার্ভার্ড প্রস্তাব করেছে কয়েকটি সম্ভাবনাময় শিক্ষাক্ষেত্র—
ডেটা সায়েন্স ও অ্যানালিটিকস (তথ্য বিশ্লেষণ)
হেলথ সায়েন্স ও অ্যালাইড হেলথ প্রফেশনস (স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও সহায়ক চিকিৎসা পেশা)
পরিবেশবিজ্ঞান ও টেকসই উন্নয়ন
ডিজিটাল মার্কেটিং ও মিডিয়া
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং
প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোক্তা শিক্ষা
কেন এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ
২০২৫ সালের ‘স্টুডেন্ট চয়েজ’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকৌশল, কম্পিউটার সায়েন্স ও নার্সিংয়ের মতো বিষয় এখনো ভালো বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হলেও শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক চিন্তা ও সৃজনশীল দক্ষতা যোগ করতে হবে, না হলে তারা দ্রুত পিছিয়ে পড়বে।
হার্ভার্ডের গবেষণার মূল বার্তা হলো, ডিগ্রির গুরুত্ব থাকলেও তার মানে বদলে গেছে। এখনকার শিক্ষা হতে হবে এমন, যা প্রযুক্তি, মানবিকতা ও অভিযোজনযোগ্যতার সমন্বয়ে তৈরি। ভবিষ্যতের কর্মজীবনে টিকে থাকতে হলে একটিমাত্র ডিগ্রির চেয়ে অবিরাম শেখা ও দক্ষতা হালনাগাদ করাই হবে সাফল্যের আসল চাবিকাঠি।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল