অন্তু মিয়া মাত্র ১১ বছর বয়সে মগবাজার রেললাইনের পাশে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে কাজ করে এক বছর ধরে। ওয়েল্ডিং ও মেটাল কারখানার কাজ করেছে ৯ বছর বয়স থেকে। অন্তু জানায়, সে এখন আগের মতো কানে শুনতে পায় না। ওয়েল্ডিং মেশিনের শব্দে তার এমনটা হয়েছে। অন্তু জানায়, ৯ বছর বয়সে বাবা মাকে ফেলে চলে যায়। মগবাজার পেয়ারাবাগ বস্তিতে সে তার মা ও ছোট বোনকে নিয়ে থাকে। মা বাসাবাড়িতে কাজ করেন। দেশে এমন অন্তু মিয়া রয়েছে ১০ লক্ষাধিক, যারা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। ইউনিসেফ এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) রিপোর্ট অনুযায়ী- সারা দেশে ৩৬ লক্ষাধিক শিশু শ্রমিক রয়েছে।
২০২৫ সালের রিপোর্টে ইউনিসেফ জানায়, ২০১৩ সালে যেখানে দেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের হার ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ, ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৭ শতাংশে (প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু)। একই সময়ে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে শ্রমে যুক্ত থাকার সামগ্রিক হার ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯ শতাংশে। ২০১৩ সালে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে সামান্য বেড়ে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে ২০২২ সালে।
এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা শিগগিরই শিশুশ্রমরোধে বাস্তবসম্মত আইন করতে যাচ্ছি।
আইএলও বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গুঞ্জন ডালাকোটি বাংলাদেশে শিশুশ্রম নিরসনের অগ্রগতির স্থবিরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন, পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হলে দরকার স্থায়ী, দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উদ্যোগ নেওয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার বলেন, শিশুশ্রম রোধে বাবা-মাকে সচেতন করতে হবে। পরিবারের কর্মক্ষম কাউকে সেলাই মেশিন কিংবা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করা, লোন দেওয়া ইত্যাদি কার্যক্রম শিশুশ্রম রোধে কাজ হবে। একান্তই প্রয়োজন হলে সুস্থ কাজের পরিবেশ ও পড়াশোনা নিশ্চিত করে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে শিশুদের নিয়োজিত করা যেতে পারে। পড়াশোনার পাশাপাশি দক্ষ কর্মী হয়ে উঠতে পারবে। হঠাৎ করে শিশুশ্রম বন্ধ করা যাবে না। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন জরুরি। তিনি বলেন- সম্মিলিত উদ্যোগে শিশুশ্রম নির্মূল করা সম্ভব।