‘সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাসংক্রান্ত ত্রয়োদশ সংশোধন পুনরুজ্জীবিত বা পুনর্বহাল হলেও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সম্ভব নয়। ত্রয়োদশ সংশোধনের বিধান অনুসারে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কথা সংবিধানে বলা আছে। দ্বাদশ সংসদ ভেঙেছে এক বছরের বেশি আগে। তাই বর্তমানে যে অন্তর্বর্তী সরকার আছে, এটাই কন্টিনিউ করবে। কারণ এ সরকারের তিনটি ম্যান্ডেট আছে। একটি হচ্ছে বিচার, দ্বিতীয়টি সংস্কার আর তৃতীয়টি নির্বাচন।’ গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চে ত্রয়োদশ সংশোধন বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আনীত আপিল শুনানিতে এসব কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর নিয়োজিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। এদিন জামায়াতের পক্ষে আরও শুনানি করেন আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিকী। তাঁদের শুনানি শেষ হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আপিলের পক্ষে শুনানি শুরু করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বদরুদ্দোজা বাদল। আজও এ বিষয়ে শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে। এর আগে ২১ ও ২২ অক্টোবর দুই দিন শুনানি করেন ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ আপিলকারীর আইনজীবী শরীফ ভূইয়া। আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবিধানে পুনরুজ্জীবিত হলেও বাস্তবে এটি কার্যকর করা এ মুহূর্তে সম্ভব নয়। কারণ এখন যে সিস্টেমের (ব্যবস্থার) মধ্যে আছি, তাতে ত্রয়োদশ সংশোধনের ৫৮ক, খ, গ, ঘ প্রয়োগ করার সিচ্যুয়েশন বাংলাদেশে আপাতত নাই। এটাকে (ত্রয়োদশ সংশোধন) রিস্টোর করা হলেও সেটি ডরমেন্ট (সুপ্ত অবস্থায়) থাকবে। পরিস্থিতি সাপেক্ষে এটাকে অ্যাপ্লাই করতে হবে। বর্তমানে কোনো সংসদ নাই। সুতরাং সংসদ ভাঙার কোনো প্রশ্ন আসে না। সংসদ যদি না ভাঙে তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কী করে গঠিত হবে? অন্তর্বর্তী সরকার যে আছে, এটাই কন্টিনিউ করবে। কারণ এ সরকারের তিনটি ম্যান্ডেট আছে। একটি হচ্ছে বিচার, দ্বিতীয়টি সংস্কার আর তৃতীয়টি নির্বাচন।’
শুনানি শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে কী বলেছেন, জানতে চাইলে আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রিস্টোর (পুনরুদ্ধার বা পুনর্বহাল) করা উচিত। কিন্তু তার সঙ্গে (আদালতের) কোনো পর্যবেক্ষণ দেওয়া উচিত না। যেহেতু একটা বৃহত্তর সংস্কার প্রক্রিয়া চলমান। জুলাই সনদ হয়েছে, আদেশ হবে, গণভোট হবে এবং পরবর্তী সংসদে এটি (তত্ত্বাবধায়ক) নিয়ে আলোচনা হবে। এর জন্য একে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টের সুনির্দিষ্ট কোনো পর্যবেক্ষণ থাকা উচিত না। পর্যবেক্ষণ বা নির্দেশনা দিলে তাতে বড় ধরনের কেওয়াজ বা বড় ধরনের আনসার্টিনিটির (অনিশ্চয়তা) তৈরি হতে পারে। বরং এ আপিলটা (ত্রয়োদশ সংশোধন বাতিলের বিরুদ্ধে) মঞ্জুর বা খারিজ হবে কি না, এটাই হওয়া উচিত সুপ্রিম কোর্টের নিষ্পত্তির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। এখানে যদি বাড়তি কোনো পর্যবেক্ষণ থাকে, ডিরেকশন (নির্দেশনা) থাকে তাহলে জুলাই সনদ এবং পার্লামেন্টে উপস্থাপনের জন্য যে প্রপোজাল (প্রস্তাব) অ্যাগ্রি করেছে রাজনৈতিক দলগুলো, সেই বৃহত্তর সংস্কার প্রক্রিয়া কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটাই ছিল আজকে আমাদের সাবমিশন।’