দক্ষিণ এশিয়ার স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র ভুটান। তবে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে তার নাম। কিন্তু কেন তারা এতো সুখী, তা নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম নয়।
বিট্রিশ সংবাদমাধ্যমে ফিন্যান্সিয়াল টাইমের এক প্রতিবেদনে এর নেপথ্যের কারণ খুঁজে বের করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখানকার বাসিন্দারা প্রতিদিন মৃত্যুর কথা মনে করে। এই চিন্তা থেকে তাদের জীবনের মূল্য বোঝার ও সত্যিকারের সুখ অর্জনের পথকে সহজ করে দিয়েছে।
দেশটিতে একজন খাবার খাওয়ার সময় মনে করে, এই খাবারটি শেষ খাবার হতে পারে। বাসা থেকে বের হওয়ার আগেও তাদের মনেও এমন চিন্তা কাজ করে। ঘুমানোর সময় স্মরণ জেগে উঠবে না। এমন চিন্তা ধারণা ভুটানের মানুষের জীবনের সঙ্গে মিশে রয়েছে। তারা ছোট ছোট শিলার চূর্ণ তৈরি করে। যা ভিক্ষুরা মৃতদের ছাই থেকে তৈরি করেন। এসব চূর্ণ গুহা বা রাস্তার পাশে রাখা থাকে। মৃতদের আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
ভুটানের কল্পকথা হলো, সত্যিকারের সুখ পেতে হলে দিনে পাঁচবার মৃত্যুর কথা ভাবতে হবে। এমন চিন্তা তাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মন দিতে সহায়তা করবে। মৃত্যু যেখানে, জীবনও সেখানে। এই দেশের বাসিন্দারা জীবনের ছোট ছোট আনন্দকে খুব গুরুত্ব দিয়ে উপভোগ করে।
পাহাড়, কুয়াচ্ছন্ন বন আর সবুজ ধানের খেত সবই জীবনে চলতে শক্তি জোগায়। ভুটানের মানুষের অর্থ খুব বেশি নয়, তাদের হাতে প্রচুর সম্পদও নেই। তবু তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট আনন্দকে বড় সুখ মনে করে।
খামার থেকে তাজা খাবার পাওয়া, প্রতিটি মন্দির থেকে আধ্যাত্মিক শান্তি পাওয়া ও পাইন গন্ধযুক্ত সতেজ বাতাসে শ্বাস নেওয়ায় এসবই তাদের কাছে আসল সুখের উৎস। তাদের উপলব্ধি জীবনের সত্যিকারের আনন্দ টাকা পয়সা বা জিনিসপত্রে নয়। দেশটিতে ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। লোকধর্ম ও খ্রিস্টর্ধম পালন করে অনেকে।
প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, সাদাসাধি জীবন আর আধ্যাত্মিকতার মধ্যেও সুখ খুঁজে পাওয়া যায়। সুখে থাকার বিষয়টি ভুটানের সরকারি নীতিতেও অন্তর্ভুক্ত। দেশটির চতুর্থ রাজা জিগমে সিংয়ে ওয়াংচুক ‘মোট জাতীয় সুখ’ ধারণা তৈরি করেছিলেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, ভুটানের মানুষকে শুধু অথনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করা নয়। এর চেয়ে তাদের মানসিক শান্তি সমাজের সুস্থতা ও পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
দেশটিতে ১৯৯৯ সাল থেকে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে। দেশের বনগুলোকে শুধু গাছের ভান্ডার হিসেবে দেখা হয় না। তারা সেগুলোকে জীবনের অংশ হিসেবে দেখে এবং সম্মান করে।
ভুটানের সংবিধানে বলা হয়েছে, দেশের অন্তত ৬০ শতাংশ জমি বনভূমি হিসেবে রাখা বাধ্যতামূলক। এই নীতির কারণে ভুটান বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র কার্বন নেগেটিভ দেশ হিসেবে পরিচিত।
ভুটানে আসা পর্যটকদের জন্য ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি’ আছে। প্রতি রাতের জন্য ১০০ ডলার ফি দিয়ে পর্যটকেরা দেশের প্রকৃতি সংরক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষামূলক প্রকল্পে অবদান রাখেন। এতে পর্যটকরা ঘুরে দেখার পাশাপাশি ভ্রমণে শান্ত অর্থপূর্ণ ও ন্যায়পরায়ণ সমাজের অংশ হওয়ার সুযোগ দেয়।
ভুটানের সংস্কৃতি, মানুষের কল্পকথা এবং আধ্যাত্মিক চিন্তা ভাবনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং মৃত্যুর কথা মনে রাখা।
বিডি প্রতিদিন/কামাল