সৌম্য সরকার এখন যে ফর্মে আছেন, সেটিকে মোটেও খারাপ বলা চলে না। বরং দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙে যেন নিজেকে নতুনভাবে চিনিয়ে দিচ্ছেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুরে সিরিজ নির্ধারণী ওয়ানডেতে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে অনবদ্য ৯১ রানের ইনিংস। ৮৬ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় গড়া এই ইনিংসটি শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং বাংলাদেশের ওপেনিং ব্যাটিংয়ে নতুন করে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়েছে।
দীর্ঘদিন ফর্মহীনতায় ভুগে জাতীয় দল থেকে ছিটকে পড়েছিলেন সৌম্য। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখিয়ে ফেরেন ওয়ানডে দলে। আর ফিরেই যেন পুরোনো ছায়া ফিরে পেয়েছেন সবাই—ঝলক দেখিয়েছেন আগ্রাসন, আত্মবিশ্বাস ও পরিণত ব্যাটিংয়ের।
মিরপুরের কালো উইকেটে ইনিংসের সূচনাতেই ছিলেন আগ্রাসী। ওপেনিংয়ে সাইফ হাসানকে সঙ্গে নিয়ে গড়েন ১৭৬ রানের জুটি—যা বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি এবং মিরপুরে সর্বোচ্চ ওপেনিং পার্টনারশিপ। সাইফ ৮০ রানে ফিরলেও, সৌম্য এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির পথে। কিন্তু নার্ভাস নাইনটিতে এসে খারি পিয়েরে-র হাতে ধরা পড়েন তিনি।
ইনিংসের শুরুটা তাঁর জন্য সহজ ছিল না। প্রথম সাত বলে কোনো রান পাননি। কিন্তু এক বাউন্ডারি যেন বদলে দেয় পুরো দৃশ্যপট। এরপর ধীরে ধীরে ছন্দে ফেরেন, শটের পরিধি বাড়ান, রোস্টন চেজ ও জাস্টিন গ্রিভসের বোলিংয়ে আধিপত্য বিস্তার করেন। কাভার ড্রাইভ, রিভার্স সুইপ, পুল—সব শটে ফুটে উঠেছে তাঁর আত্মবিশ্বাস।
ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে সৌম্য খেলেছেন ১৬ ম্যাচে ১৫ ইনিংস, করেছেন ৫৭০ রান। গড় ৪০.৭১, স্ট্রাইক রেট ৮৮.৩৭—এই সময়ের মধ্যে তাঁর ব্যাটে এসেছে একটি সেঞ্চুরি ও তিনটি হাফসেঞ্চুরি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই গত বছর ডিসেম্বরে করেছিলেন ৭৪ রানের ইনিংস। ধারাবাহিকভাবে এমন পারফরম্যান্সই এখন সৌম্যকে নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
২০১৫ সালে মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১২৭ রানের সেঞ্চুরি করে যে প্রত্যাশা তৈরি করেছিলেন, তার প্রতিফলন মিলেছে বহু বছর পর এই ইনিংসে। অনেক উত্থান–পতনের পরও সৌম্য প্রমাণ করলেন—তাঁর মধ্যে এখনও দেশের জন্য লড়াই করার মানসিকতা আছে।
বাংলাদেশ দলের ওপেনিং ব্যাটিং দীর্ঘদিন ধরেই ছিল অনিশ্চয়তায় ভরা। কিন্তু সৌম্যর এমন প্রত্যাবর্তন যেন সেই জায়গায় এনে দিয়েছে নতুন আশার আলো। এই ইনিংস শুধু তাঁর আত্মবিশ্বাস ফেরায়নি, পুরো দলকেও অনুপ্রাণিত করেছে।
সৌম্য সরকার বুঝিয়ে দিয়েছেন—তিনি এখনও শেষ হয়ে যাননি, বরং নতুনভাবে শুরু করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/আশিক