বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী মানবিক বাংলাদেশ গড়তে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ধানের শীষে ভোট দিয়ে এ দেশের মানুষ কখনও প্রতারিত হয়নি। বিএনপি বরাবরই সাধারণ মানুষের ভোটের মর্যাদা রেখেছে। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে উন্নয়ন হয়, মানুষ শান্তিতে থাকে।
বৃহস্পতিবার বিকালে ফটিকছড়ি উপজেলা সদর বিবিরহাট বাজারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্তৃক উপস্থাপিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ-পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
দুপুর থেকে ফটিকছড়ি ও ভুজপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হন। বিকাল তিনটা নাগাদ ফটিকছড়ি গাউছিয়া মার্কেট এলাকা কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সমবেত হাজারো জনতার উদ্দেশে কাদের গনি চৌধুরী বক্তব্য দেন। এরপর তিনি বিবিরহাট বাজারে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ শেষে গণমিছিল বের করেন। মিছিলটি বিবিরহাট বাজার, নাজিরহাট, রোসাংগিরি, আজিম নগর হয়ে পুণ্যভূমি মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফে এসে শেষ হয়। তিনি সেখানে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাজার জিয়ারত করেন।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ধানের শীষ বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রতীক। গণতন্ত্রে উত্তরণ ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক। তারেক রহমান একটি মানবিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন, যেখানে মানুষ শান্তিতে থাকবে, কোনো নাগরিক তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণতন্ত্র বারবার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে দেশে স্বৈরশাসন, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা জনগণের প্রত্যাশাকে বারবার ব্যাহত করেছে। বিশেষত, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ার অভাব এবং স্বচ্ছতার সংকট গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি দুর্বল করে দিয়েছে। বিএনপির ৩১ দফা মূলত এই সংকটগুলো চিহ্নিত করে একটি নতুন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছে। এটি কেবল সমস্যাগুলোর সমাধানই নয়, বরং একটি টেকসই গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তোলারও পরিকল্পনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) যে ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছে, তা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি সুসংহত ও সময়োপযোগী নীতিমালা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। এই প্রস্তাবনায় গণতন্ত্রের বর্তমান সংকট নিরসন এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাগুলো নিয়ে একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৩১ দফা জাতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হিসেবে উঠে এসেছে। গণতন্ত্র, সুশাসন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারের ভিত্তিতে প্রণীত এই দফাগুলো দেশকে নতুন এক যুগের পথে নিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রের সংকট বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিনের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে নানান সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির ৩১ দফায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং শক্তিশালীকরণের জন্য স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করার মতো বিষয়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বিএনপি প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপক্ষে, বরং জনগণের ঐক্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার পক্ষে বিশ্বাসী—উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একটি স্থিতিশীল গণতন্ত্র কায়েম করার জন্য বহুদলীয় রাজনীতির ভিত্তিতে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার রাজনৈতিক দর্শন অনুসারে, গণতান্ত্রিক জীবনধারা এবং গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থার রক্ষাকবচ হিসেবে জাতীয় সংসদকে শক্তিশালী করে জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিত করা হয়।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করে বেগম খালেদা জিয়া সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পার্লামেন্টারি পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটা জাতীয় নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে। বিএনপি সব মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে এবং সফলভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল। এই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সব মত ও পথের মানুষের সঙ্গে আলোচনা, মতবিনিময় ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে, যেখানে সামাজিক বৈষম্য দূর করা হবে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ে ভবিষ্যতমুখী মানবিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়ে তোলা হবে।
প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও অভিপ্রায় অনুযায়ী, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক একটি সম্মিলিত, বৈষম্যহীন এবং সম্প্রীতির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রুতিশ্রুতি দিচ্ছে বিএনপি। এটার মাধ্যমে রাষ্ট্রে ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, গোত্র, পেশা নির্বিশেষে স্নেহ ও ভালোবাসার বন্ধনে সবাই আবদ্ধ হয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে এগিয়ে যাবে। এ সময় সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, লেলাং ইউপি প্যানেল মো. সারোয়ার হোসেন, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক এম. মোরশেদ হাজারী, কে. এম. আজম, ওসমান তাহের সম্রাট, আহসানুল করিম রাজন, আহমদ গনি চৌধুরী, মুহাম্মদ হোসেন, সেলিম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল