নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের সময় কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার না করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনও কোনো চাপের কাছে মাথা নত করবে না। আইন অনুযায়ী নির্দেশনা দেবে কমিশন।
গতকাল আগারগাঁওয়ে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সিইসি কথা বলছিলেন।
সুষ্ঠু ভোটের দায়িত্ব পালনে সবাইকে ইসির পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের কাজের সমন্বয়ে ভালো ভূমিকা রাখার তাগিদ দেন তিনি।
সিইসি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সার্বিক সহযোগিতায় থাকব এবং নির্বাচন কমিশনও কিন্তু কারও কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। সুতরাং আমরা আপনাদের অন্যায় কোনো আদেশ দেব না। অন্যায় কোনো হুকুম দেব না। আইন অনুযায়ী আমাদের নির্দেশনা যাবে আপনারা সেটা সেভাবে পালন করবেন।’ অনুষ্ঠানে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সিইসি বলেন, ‘যে ধরনের কাজের দায়িত্ব পড়ুক না কেন সেটা আপনারা আইনসম্মতভাবে, নিউট্রালি, প্রফেশনালি করবেন। আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। আমাদের দেশের এ দুরবস্থার একটা মূল কারণ হলো আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নই। যে জাতি আইনের প্রতি যতটা শ্রদ্ধাশীল সে জাতি তত সভ্য বলে আমরা মনে করি।’ ভোটে আইন-বিধি প্রতিপালন ও অনুসরণে কমিশনের দায়িত্বের কথা তুলে ধরেছেন সিইসি।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সর্বস্তরে আইন মেনে চলব, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকব। আপনারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনের মধ্যে সমন্বয়টা একটা বড় জিনিস, এ সমন্বয়ের দায়িত্বটা মূলত আপনাদের ওপর নির্ভর করে।’
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রিসাইডিং অফিসার, কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল, জেলা মনিটরিং সেল, ইলেকশন মনিটরিং সেল থাকবে। এ ছাড়া সার্বিক সমন্বয় ‘সিরিয়াস’ করার বিষয়ে ইউএনওদের ভূমিকা চান সিইসি।
তিনি বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে সমন্বয়টা আপনারাই করে থাকেন। সুতরাং নির্বাচনের সময়ও এ সমন্বয়টা খুবই জরুরি। কোনো ক্রাইসিস হলে শুরুতেই যেন ট্যাকেল করা যায় সে চেষ্টা আপনারা নেবেন। সবকিছু শেষ হওয়ার পরে তখন দেখবেন যে আর কেউ নাই, সবাই মারামারি করে ভোটের কেন্দ্র দখল করে, বাক্স দখল করে বাড়ি চলে গেছে আর আপনি গিয়ে হাজির হলেন সেটা যাতে না হয়। এটা আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে।’
অস্তিত্বের প্রশ্নে হিম্মতের সঙ্গে কাজ করতে হবে : ইসি
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘অস্তিত্বের প্রশ্নে হিম্মতের সঙ্গে কাজ করতে হবে। ভয় পাবেন না, আমরা পাশে আছি।’ তিনি জানান, ‘৫ আগস্টের পর কিছু সময় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থাকলেও এখন কর্মকর্তাদের মধ্যে ভয়ের কিছু নেই। দুইটা কেয়ারটেকার সরকারের সময় সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা পেয়েছি। এখন আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবহ তৈরি হচ্ছে। এ সরকারের অধীনে সততা ও নিষ্ঠা দেখানোর সুযোগ এটি।’
ভালো নির্বাচন না হলে নিন্দিত জাতিতে পরিণত হব : ইসি মাছউদ
‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভালোভাবে করতে না পারলে বিশ্ব, মানুষ এবং জাতির কাছে আমরা অত্যন্ত নিন্দিত জাতি হিসেবে পরিণত হব’ বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবদুর রহমানেল মাছউদ। তিনি বলেন, ‘ভালো নির্বাচন করা ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সুন্দর, সুষ্ঠু ও মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে হবে।’
ইসি মাছউদ বলেন, ‘আমরা যারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনার জন্য আইনগতভাবে বাধ্য ছিলাম, তারা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতাম তাহলে কি জাতিকে এ নির্মম পরিণতি দেখতে হতো? পাশের রাষ্ট্রের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি, যদি তাদের এ পরিণতি না হয় তবে এক জাতি, এক দেশ হয়েও কেন আমরা পারব না?’
ইসি মাছউদ আরও বলেন, ‘প্রত্যেকে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে সব প্রতিকূলতা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার স্বার্থে সুন্দর, সুষ্ঠু এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হব।’