আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিত হওয়া অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার। মামলার আসামি হিসেবে তাদের কোথায় রাখা হবে সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয় বলেও তিনি জানান। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা এসব কথা জানান।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়ে সেনা সদস্যরা যেভাবে এসেছেন বা যেভাবে ওনাদের নিয়ে আসা হয়েছে, এখানে সেনা প্রশাসন বা সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, সেনাপ্রধান ওনারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন এটা অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার। তারা আইনের শাসনের প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়েছেন এটা আমরা খুব পজিটিভলি (ইতিবাচকভাবে) দেখছি।’
সাবজেল নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সাবজেলে কেন রাখা হয়েছে বা ওনাদের কোথায় রাখা হবে এটা সম্পূর্ণভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভুক্ত বিষয়। যেটা প্রয়োজন, যেটা সঠিক মনে করবেন এটা ওনারা করবেন। এটার জবাব দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই।’
পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের আমলে গুম এবং জুলাই গণ অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিন মামলায় অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে গতকাল ঢাকা সেনানিবাসের ‘সাবজেল’ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়। পরে আদালত ওই কর্মকর্তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া মামলায় শেখ হাসিনাসহ অন্য পলাতক আসামিদের বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। এ তিন মামলায় ২৫ জন সাবেক-বর্তমান সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৩২ জন আসামি। তাদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়ার তথ্য জানা যায়।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিএনপি যে পরামর্শ দিয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, বরং অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা চেয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘ওনারা (বিএনপি) চেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো ভূমিকা পালন করে। নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। তো আমরা ওনাদের বলেছি, আমরা নিরপেক্ষ ভূমিকাই পালন করছি। নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, এখন থেকে জনপ্রশাসন বা অন্য কোনো জায়গায় বড় বড় বদলির ব্যাপারটা উনি নিজে দেখবেন। তো বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, এটা বলেনি। বলেছে, ইন্টেরিম সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো রোল (ভূমিকা) পালন করতে হবে।’
নির্বাচনকালীন সরকার পরিবর্তন হবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, না। এ ধরনের কোনো কিছু আলোচনা হয়নি। এটা উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনার বিষয়। নির্বাচনকালীন সরকার ছোট হবে, না কেমন হবে, এ ধরনের কোনো দাবিও কোনো মহল থেকে উত্থাপিত হয়নি। উপদেষ্টাদের মধ্যে দলীয় কেউ থাকলে তাদের উপদেষ্টা পরিষদে না রাখার বিষয়ে বলেছে বিএনপি।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে সব দলই অভিযোগ করে, এক দল বলে ওই দলের লোক আছে, আরেক দল বলে ওই দলের লোক আছে। যেহেতু সব দলই অভিযোগ করে, অন্য দলের লোক আছে। তার মানে হচ্ছে আমরা নিরপেক্ষভাবেই দায়িত্ব পালন করছি।’
আগামী নির্বাচন নিয়ে আস্থার অভাব আছে কি না জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে আস্থার অভাব আছে কি না, তা জানা নেই। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে রকম অনৈক্য, একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে যেভাবে বলে, সে কারণেই হয়তো এই আস্থার অভাব দেখা দিতে পারে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাস্তব অগ্রগতি দেখা গেলে এসব সংশয় দূর হবে।