ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় আনা অভিযোগগুলো প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছেন আসামি পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বেকসুর খালাস চেয়েছেন তিনি। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ দাবি করেন।
এর আগে গত ১৬ অক্টোবর টানা পাঁচ দিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে প্রসিকিউশন। ওই দিন হাসিনা-কামালের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। শেখ হাসিনা ও কামালের সঙ্গে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও এ মামলার আসামি। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে এই মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকালও তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। আমির হোসেনের যুক্তি উপস্থাপন শেষে চৌধুরী মামুনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। পরে প্রসিকিউশনের পক্ষে এই দুই আইনজীবীর তুলে ধরা যুক্তির জবাব দেওয়া শুরু করেছেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। পরে এই জবাব দাখিল অব্যাহত রেখে আজ পর্যন্ত এ মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এ সময় প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম, বি এম সুলতান মাহমুদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান প্রমুখ।
গতকাল যুক্তিতর্কে সাক্ষীদের জবানবন্দির বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেন আইনজীবী আমির হোসেন। একপর্যায়ে ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়া রাজসাক্ষী মামুনের সাক্ষ্য সামনে নিয়ে আসেন আমির হোসেন। তিনি বলেন, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সম্পর্কে আমি খুব বেশি কথা বলব না। কারণ, উনি যা যা বলেছেন নিজেকে বাঁচার জন্য বলেছেন। সাক্ষীকে আমি ডিনাই করছি। যুক্তিতর্কে তদন্ত কর্মকর্তার বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা যে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তা অসম্পন্ন। অসম্পন্ন কোনো বিষয়ের ওপর আসামিকে দায় দেওয়া বা সাজা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এত মানুষ হত্যা হলো, তদন্ত কর্মকর্তা একটি অস্ত্রও জব্দ করতে পারলেন না। না পারার যে সব ব্যর্থতা, এই দায় তদন্ত কর্মকর্তার। তদন্ত কর্মকর্তা যদি সঠিকভাবে তদন্ত করতেন, তাহলে আমার আসামিদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আদালতে উপস্থাপিত হতো না।
গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। এরপর ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন।