ম্যাচ শেষ। পুরস্কার বিতরণীও শেষ। মেহেদি হাসান মিরাজরা ঢুকে পড়েছেন ড্রেসিং রুমে। সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের উৎসবের। ট্রেনার ইফতেখার ইফতি ৪-৫ ক্রিকেটার নিয়ে তখন স্প্রিন্ট টানছেন মাঠে। টানা চার সিরিজ হারের পর অবশেষে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। সিরিজ জয়ের পাইপ লাইনে উঠে অনেক বেশি নির্ভার টাইগার ক্রিকেটাররা। এখন প্রস্তুতি নেবেন চট্টগ্রামে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ খেলার। গতকাল সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছে রেকর্ড গড়ে। মিরাজ-তানভীর-রিশাদ-নাসুম চার স্পিনারের সাঁড়াশি আক্রমণে বাংলাদেশ জিতেছে ১৭৯ রানের পর্বতসমান ব্যবধানে। যা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রানের হিসাবে সবচেয়ে বড় জয়। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে আগের বড় জয় ১৬০ রানের, ২০১২ সালে খুলনায়। সব মিলিয়ে রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় ১৮৩ রানে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২০২৩ সালে সিলেটে। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। মিরাজরা প্রথম ওয়ানডে জিতেছিলেন ৭৪ রানে। দ্বিতীয়টি ‘টাই’ করে হেরে যায় সুপার ওভারে। গতকাল ২৯৭ রান করে সিরিজ নিশ্চিত করে সফরকারীদের ৩০.১ ওভারে ১১৭ রানে গুড়িয়ে দিয়ে।
প্রথম ওয়ানডে যে উইকেটে হয়েছে, সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটিও সেই একই উইকেটে হয়েছে। শুধু পাঁচ দিনের ব্যবধানে উইকেটের চরিত্র বদলেছে পুরোপুরি। প্রথম ওয়ানডেতে রান করতে যেখানে কষ্ট করতে হয়েছে ব্যাটারদের, সেখানে সাবলীল ব্যাটিং করেছে মিরাজ বাহিনী। অবশ্য সঙ্গে শুরুর ধারাবাহিকতা শেষ পর্যন্ত ছিল না। শুরুতে টাইগার দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকার ১৭৬ রানের ভিত গড়েন। সেই ভিতে দাঁড়িয়ে ২৯৬ রান করে বাংলাদেশ। মিরপুরে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে চারটি মাইলফলক মিস করেছে মিরাজ বাহিনী। প্রথম মিস করেছে ব্যক্তিগত দুটি মাইলফলক এবং দ্বিতীয়ত দলগত দুটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা সাইফ ও সৌম্য দুজনই মিস করেছেন সেঞ্চুরি। বাংলাদেশ মিস করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয়বার ৩০০ ঊর্ধ্ব ইনিংস করার। টস জিতে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। ওপেনাররা প্রথম দুই ওয়ানডেতে বড় কোনো জুটি গড়তে পারেনি। গতকাল দুজনে উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে রেকর্ড গড়েন। দুজনে বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন। অবশ্য সেরা জুটি তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের। ২০২০ সালে সিলেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২৯২ রান করেছিলেন দুজনে। গতকাল দুই শ রানের জুটি গড়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ২৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সাইফের আউটে সেই সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। রোস্টন চেজের দ্বিতীয় বলটিকে সুইপ খেলেন সাইফ। লং অনে বল সীমানা দড়ি পাড় হওয়ার আগে তালুবন্দি হন জাস্টিন গ্রিভসের। সাইফ ছয় ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবার হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেন। ৭২ বলে ৮০ রানের ইনিংসটি খেলেন ৬টি করে চার ও ছক্কায়। মিরপুর স্টেডিয়ামে সাইফ-সৌম্য জুটি ১০ বছর পর শতরানের জুটি গড়েন। ২০১৫ সালে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে ১৪৭ রানের জুটি গড়েছিলেন তামিম ও ইমরুল কায়েস। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে দেড় শ রানের জুটি হয়েছে ৬টি। সাইফের বিদায়ের পর খুব বেশি সময় উইকেটে টিকে ছিলেন না বাঁ-হাতি ওপেনার সৌম্য। ‘টাই’ ম্যাচে বাঁ-হাতি ওপেনার রান করেছিলেন ৪৬। গতকাল চার-ছক্কায় ৯১ রান করেন। ক্যারিয়ারে যখন চতুর্থ সেঞ্চুরির অপেক্ষায়, তখনই ২৯ ওভারের প্রথম বলে লং অনে বাঁ-হাতি স্পিনার আকিল হোসেনের বলে ক্যাচ হন।
৮৬ বলের ইনিংসটিতে ৭টি চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা মারেন।
এটা তার ক্যারিয়ারের ১৪ নম্বর হাফ সেঞ্চুরি। দুজনের জুটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম উইকেটে সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল ১৪৪ রান, ২০১৯ সালে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে করেছিলেন তামিম ও সৌম্য। সব মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যে কোনো জুটিতে সর্বোচ্চ রানের জুটি তামিম ও সাকিব আল হাসানের। ২০১৮ সালে প্রোভিডেন্সে ২০৭ রান করেছিলেন দুজনে।
দুই ওপেনারের গড়ে দেওয়া ভিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্কোর যখন ৩০০ পেরোনোর কথা। তখন নাজমুল হোসেন শান্তর দৃঢ়তা ছাড়া বাকি কেউই বড় অঙ্কের রান করতে পারেননি। ২৯৬ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের স্কোর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ৩ উইকেটে ৩২২ রান। ২০১৯ সালে টনটনে স্কোরটি করেছিল টাইগাররা। আরও একবার তিন শা ঊর্ধ্ব স্কোর করেছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে বেসেটেরেতে ৬ উইকেটে ৩০১ রান করেছিল টাইগাররা। ঘরের মাঠে গতকালের স্কোরটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০২১ সালে চট্টগ্রামে ৭ উইকেটে ২৯৭ রান করেছিলেন মিরাজরা। মিরপুরে অবশ্য ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে এটা সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল ৭ উইকেটে ২৫৮ রান।