দিনের শুরুটা হয় ফজর দিয়ে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা অনেকেই এই সময় ঘুমে কাটাই। অথচ ফজরের নামাজ এমন এক ইবাদত, যা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় ও বরকতময়। কোরআন ও হাদিসে ফজরের নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, বিশেষ করে মসজিদে জামাতে ফজর নামাজ আদায় করা-এটা শুধু একটি নামাজ নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক মহামূল্যবান সুযোগ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে নামাজ পড়া মুমিনদের অপরিহার্য দায়িত্ব।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৩)
ফজরের নামাজ আদায় করার ফজিলত
১. মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করা জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম। এ বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুটি শীতল নামাজ আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৭৪)
দুটি শীতল নামাজ হলো ফজর ও আসর, কারণ এ সময়ে আবহাওয়া শীতল থাকে এবং ঘুম বা ব্যস্ততার কারণে মানুষ সাধারণত অলসতা বোধ করে।
২. ফজর ও আসরের নামাজ জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে নামাজ আদায় করে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৩৪)
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি ফজর ও আসরের নামাজ নিয়মিত আদায় করে, তার জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়।
৩. আল্লাহ ফজরের নামাজ আদায়কারীদের নিয়ে ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করেন।
রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ফেরেশতারা রাতে ও দিনে পালাক্রমে আসে। তারা আসর ও ফজরের নামাজের সময় একত্র হয়। এরপর যারা রাতে তোমাদের সঙ্গে ছিল তারা আসমানে ফিরে যায়, এবং আল্লাহ, যিনি তাদের সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন, জিজ্ঞাসা করেন : ‘তোমরা আমার বান্দাদের কেমন অবস্থায় রেখে এসেছ?’ ফেরেশতারা বলে : ‘হে আমাদের রব! আমরা তাদের রেখে এসেছি যখন তারা নামাজ আদায় করছিল, এবং তাদের কাছে যখন এসেছিলাম তখনো তারা নামাজ আদায় করছিল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৮৬)
৪. ফজরের নামাজে ওঠা বান্দাকে দেখে আল্লাহ তাআলা গর্বিত হন।
নবী করিম (সা.) বলেছেন : আমাদের রব দুই শ্রেণির মানুষের প্রতি বিস্ময় প্রকাশ করেন—
এক. সেই ব্যক্তি, যে তার আরামদায়ক বিছানা, প্রিয় কম্বল, পরিবার ও স্বস্তি ত্যাগ করে নামাজ আদায়ের জন্য উঠে দাঁড়ায়। আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন : ‘আমার এই বান্দার দিকে তাকাও! সে নিজের আরাম ও ভালোবাসার জিনিসগুলো ছেড়ে উঠে এসেছে শুধু আমার সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় এবং আমার শাস্তির ভয়ে।’ (সুনানে ইবনে হিব্বান, হাদিস: ২৫৫৮)
৫. ফজরের সময়ে রাত ও দিনের ফেরেশতারা একত্র হয়।
আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন : রাতের ফেরেশতা ও দিনের ফেরেশতারা ফজরের নামাজে একত্র হয়। এরপর আবু হুরায়রা (রা.) বলেন : তুমি চাইলে এই আয়াতটি পড়তে পারো, ‘নিশ্চয়ই ফজরের কোরআন তিলাওয়াত সর্বদা সাক্ষী থাকে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৮) (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৮)
৬. ফজরের নামাজ আদায়কারী আল্লাহর সুরক্ষায় থাকে।
রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করে, সে আল্লাহর সুরক্ষায় থাকে। সুতরাং আল্লাহ যেন তোমাদের কাছ থেকে তার সুরক্ষার দায় দাবি না করেন; কেননা, যার কাছ থেকে আল্লাহ তার সুরক্ষার দায় দাবি করবেন, আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন এবং জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৫৭)
৭. ফজরের নামাজ জামাতে আদায়কারীরা কিয়ামতের দিন পূর্ণ নূর পাবে।
যারা রাতের শেষ প্রহরে ঘুম ত্যাগ করে মসজিদে যায়, আল্লাহ কিয়ামতের সেই ভয়াবহ দিনে তাদের নূরে আলোকিত করবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘যারা অন্ধকারে (ফজর ও এশার) নামাজের জন্য মসজিদে আসে, তাদের জন্য কিয়ামতের দিন পূর্ণ নূরের সুসংবাদ দাও।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫৬১)
৮. জামাতে ফজরের নামাজ পুরো রাতের নামাজের সমান।
মসজিদে ফজরের নামাজ আদায়ের পুরস্কার এত বিশাল যে তা রাতভর তাহাজ্জুদে দাঁড়ানোর সমতুল্য। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতে ফজরের নামাজ আদায় করে, সে যেন পুরো রাত নামাজ আদায় করেছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬)
অতএব, একজন মুমিনের দিনের সূচনা হওয়া উচিত ফজরের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে, যাতে পুরো দিন আল্লাহর রহমত ও বরকত কামনায় কাটে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই