নিউইয়র্কে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, একাত্তরের ভূমিকার জন্যই শুধু নয়, সাতচল্লিশ থেকে আজ পর্যন্ত যদি কোনো ভুল করে থাকি, তাহলে তার জন্য সবার কাছে ক্ষমা চাই। আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আজকের দিন পর্যন্ত আমরা কোনো ভুল করিনি- এটা বলব কীভাবে? কারণ আমরা মানুষ। আমাদের সংগঠন হচ্ছে মানুষের সংগঠন। আমাদের একশটির মধ্যে ৯৯টি সঠিক, একটি তো ভুল হতে পারে। সেই বেঠিক একটি সিদ্ধান্তের জন্য জাতির ক্ষতি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমার কোনো বিষয়ে জাতির ক্ষতি হলে সেজন্য মাফ চাইতে অসুবিধা কোথায়? সপ্তাহব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিন বুধবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। ‘কোয়ালিশন অব বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন’ (কোবা) আয়োজিত এ মতবিনিময় সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জামায়াতে ইসলামীর আমেরিকাস্থ সমন্বয়কারী ডা. নাকিবুর রহমান। কুইন্সের ওয়ার্ল্ড ফেয়ার মেরিনা পার্টি হলের এ সমাবেশে শুরুতেই সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ডা. শফিকুর রহমান। জামায়াত আমির আরও বলেন, এখন মাফ চাওয়ার পর কেউ কেউ বলছেন, এভাবে চাইলে হবে না, ওইভাবে চাইতে হবে। বিনা শর্তে মাফ চাইলাম, কোনো শর্ত দিলাম না, তার পরও বাকি থাকল কোথায়, এটা তো বুঝি না। তিনি বলেন, আজ আবার প্রকাশ্যে বলে গেলাম সাতচিল্লশ থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের ২২ অক্টোবর (রাত ৮টা ১১ মিনিট) পর্যন্ত আমাদের দ্বারা যে যেখানে কষ্ট পেয়েছেন, যারা কষ্ট পেয়েছেন- আমরা বিনা শর্তে তাদের কাছে মাফ চাই। এটা গোটা জাতি হলেও চাই, ব্যক্তি হলেও চাই। কোনো অসুবিধা নেই। ডা. শফিকুর বলেন, আমি একথা জীবনে বলিনি, আমার কোনো সহকর্মী বলেননি, আমার সিনিয়র যারা ছিলেন তারা বলেননি যে, আমরা সব ভুলের ঊর্ধ্বে। কোনো দল যদি দাবি করে যে, তারা সব ভুলের ঊর্র্ধ্বে- অবশ্যই জাতি এটা মানবে না। আমাদেরটা মানবে কেন? তাই আমাদের জানা-অজানা যত ভুল হয়েছে, এ ভুলগুলো যারা শুধরে দিয়েছেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আর এ ভুলের দ্বারা যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হোন, আমরা তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। জামায়াত আমির আরও বলেন, বাংলাদেশ কখনো আফগানিস্তান কিংবা পাকিস্তান অথবা ইরান হবে না। আমরা যদি জনগণের রায় নিয়ে সরকার গঠন করতে পারি তবে এটা বাংলাদেশ হবে ইনশাল্লাহ। এটা অন্য কোনো দেশ হবে না। আমাদের দেশের কৃষ্টি, কালচার, সভ্যতা, যুগের পর যুগ মিলেমিশে চলার যে সংস্কৃতি আমরা তৈরি করেছি, তার মধ্যে যে দু-চারটি কালো দাগ পড়েছে, ওগুলোকেও আমরা উপড়ে ফেলব ইনশাল্লাহ। যাতে এখানে দল-ধর্মের ব্যবধানের কারণে আর বিভক্ত না হই। আমরা এখন মেজোরিটি-মাইনোরিটিও স্বীকার করি না। আমরা বলি ‘উই নিড ইউনিটি’।
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নিকট প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হবে- জানতে চাইলে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মানুষ তার নিজের জায়গা পরিবর্তন করতে পারে কিন্তু প্রতিবেশী পাল্টাতে পারে না। আমরা আমাদের প্রতিবেশীকে রেসপেক্ট করতে চাই। একইভাবে আমরা আমাদের প্রতিবেশীর কাছ থেকে পাওনা রেসপেক্টটুকু চাই। এটা হতে হবে মিউচ্যুয়াল রেসপেক্টের ভিত্তিতে।
এখানে আমরা সমতার কথা বলছি না। কারণ, ভারত হচ্ছে বাংলাদেশের চেয়ে ২৬ গুণ বড় একটি দেশ। দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ। আমরা তাদের জায়গায় সম্মান করতে চাই। কিন্তু আমাদের যে ছোট্ট একটি ল্যান্ড আছে, আর ১১৮ মিলিয়ন পপুলেশন আছে, এটাকেও তাদের রেসপেক্ট করতে হবে। দিস ইজ আওয়ার ডিমান্ড। যদি এটা হয় তাহলে দুই প্রতিবেশী শুধু ভালো থাকব না, এক প্রতিবেশীর কারণে আরেক প্রতিবেশী বিশ্ব দরবারেও সম্মানীত হব।
বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েন সম্পর্কে জামায়াত আমির বলেন, আমরা দুটি পৃথক দল। জাতীয় প্রয়োজনে আমরা বহুদিন একসঙ্গে ছিলাম। এখন প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে। তারা তাদের কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছেন, আমরা আমাদের কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছি। আমরা কিন্তু কোনো দলকেই স্পেসিফিক টার্গেট করে কোনো কথা বলি না। আমরা কথা বলি নীতিগত। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, গত বছরের ৫ আগস্ট পরিবর্তনের পর ৮ তারিখ আমরা কয়েকটি বন্ধু সংগঠন নিয়ে বসলাম। বললাম যে, আমরা সবাই মজলুম ছিলাম, দেশবাসী মজলুম ছিল, ১৮ কোটি মানুষই মজলুম ছিল। আল্লাহতালা আমাদের সুযোগ দিয়েছেন, আসুন সবাই মিলে আমরা একটা দায়িত্বশীল আচরণ করি। কিছু কাজের কথা উল্লেখ করে আমি বললাম, এই এই কাজগুলো আমাদের করা উচিত হবে না। আমরা এটিও বলেছিলাম যে, এই কাজগুলো যদি বন্ধ করা যায় তবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা নিয়ে হয়তো আপনারা ক্ষমতায় যেতে পারবেন। আমরা কিন্তু আর কারও সঙ্গে ওইরকম দরবারে বসব না। আমরা আপনাদের পাশে থেকে বিরোধী দলের আসনে বসে প্রত্যেকটি ভালো কাজের আমরা এক শ ভাগ, ষোলোআনা সহযোগিতা করে যাব। কিন্তু জাতির ক্ষতি হয় এমন কিছু ধরা পড়লে আমরা আপনাদের প্রথমে কানে কানে বলব। যদি আপনারা বদলায়ে যান তাহলে আমাদের কাজ শেষ। আর যদি না বদলান তাহলে আমরা রাস্তায় নামব। এটাই হবে আমাদের পলিসি। তবে আমরা অনুরোধ জানাই যে, এগুলো আমরা বন্ধ করি। বন্ধ হয়নি। যা প্রত্যাশা করেছিলাম তা বন্ধ হয়নি। না হওয়ার কারণে আমরা মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু আমরা কারও নাম নিইনি। নাম নিয়ে মুখ খোলাকে যদি আপনি আপনার ওপর টেনে নিয়ে যান তাহলে মনে হবে যে আপনি এটার উপযুক্ত। রাজনীতিতে এটা হবে। এটা মেনে নিতে হবে। অন্যদের সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতা আমারও থাকতে হবে, আপনারও থাকবে। এটাই বিউটি অব ডেমোক্র্যাসি। অপরের মতটাকে রেসপেক্ট করতে হবে। শোনা লাগবে উনি কী বলতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে মার্কিন প্রশাসনের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি সিক্রেট।