জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরায় ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা আমির হোসেনকে গুলিসহ দুজনকে হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। গতকাল বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই মামলায় প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন কার্নিশে ঝুলে থাকা সেই আমির হোসেন। দিয়েছেন তার দুই পায়ে পরপর ছয় রাউন্ড গুলি লাগার বর্ণনা। জবানবন্দিতে আমির হোসেন বলেন, গুলির ভয়ে ছাদে উঠলেও পিছু নিয়ে দুই পায়ে গুলি করে দুই পুলিশ। সাক্ষ্য গ্রহণের আগে প্রসিকিউশনের পক্ষে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম। পরে এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৭ অক্টোবর দিন ঠিক করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ এই মামলায় মোট আসামি পাঁচজন। এর মধ্যে একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। পলাতক বাকি তিন আসামি হলেন- খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান ও রামপুরা থানার সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। এদিন প্রথমেই ঘটনার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। জবানবন্দি শেষে এই সাক্ষীকে জেরা করেন আসামি চঞ্চল চন্দ্র সরকারের আইনজীবী সারওয়ার জাহান ও পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
জবানবন্দির শুরুতে নিজের পরিচয় তুলে ধরেন ১৮ বছর বয়সি আমির হোসেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘গত বছর ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর আমার দোকান থেকে বাসার উদ্দেশে রওনা দেই। রামপুরা খালের ওপর সাঁকো পাড় হয়ে মেইন রাস্তায় ওঠার পর আমি দেখতে পাই, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা আন্দোলনরত জনগণ ও ছাত্রদের ওপর গুলি চালাচ্ছে।
গুলির ভয়ে আমি পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবনের চতুর্থ তলার ছাদে উঠে যাই।’ সাক্ষী বলেন, ‘তিনজন পুলিশ আমার পিছে পিছে ছাদের ওপরে উঠে আসে। পুলিশদের আসতে দেখে আমি ছাদের সঙ্গে একটি রড ধরে ঝুলে আশ্রয় নেই। একজন পুলিশ আমাকে সেখান থেকে নিচে ঝাঁপ দিতে বলে। আমি ঝাঁপ না দিয়ে রড ধরে ঝুলে থাকি। তখন ওই পুলিশ সদস্য আমাকে পিস্তল দিয়ে পরপর তিন রাউন্ড গুলি করে। তিনটি গুলিই আমার পায়ে বিদ্ধ হয়। তারপর সে চলে যায়। আরেকজন পুলিশ এসে পিস্তল দিয়ে আরও তিন রাউন্ড গুলি করে। সেই তিন রাউন্ড গুলিও আমার দুই পায়ে লাগে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে এলে আমি দেখতে পাই, আমি ফেমাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি।’ সাক্ষী আমির হোসেন বলেন, ‘যারা আমাকে বিনা কারণে গুলি করেছে, আমি তাদের শাস্তি চাই।’ এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। গত ৭ আগস্ট প্রসিকিউশনের পক্ষে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) দাখিল করেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ। গত ৩১ জুলাই চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।