‘আমাদের জনগণকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। জাতির সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের ভোটের মাধ্যমে। তাই জাতীয় নির্বাচনকে সরকারের বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা দরকার, কারণ নির্বাচনই সবচেয়ে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সমাধান।’
গতকাল সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘পলিটিকস ল্যাব : পাবলিক ডায়ালগ’ শীর্ষক সংলাপে এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়। এতে দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদরা অংশ নেন। জার্মান ফাউন্ডেশন ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটুংয়ের (এফইএস) সহযোগিতায় এ সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
সংলাপে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ সদস্যসচিব তাসনিম জারা, সিজিএসের সভাপতি জিল্লুর রহমান ও নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী। জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের কাজ ছিল জাতিকে ঐক্যের পথে নিয়ে আসা, মতপার্থক্যের জায়গাগুলোয় বোঝাপড়ার সংস্কৃতি তৈরি করা। কিন্তু আজ দেখা যাচ্ছে তারা অনৈক্যের দলিল হাজির করেছে। কমিশনের কাজ তো যতটুকু ঐক্য সম্ভব সেটুকুই তুলে ধরা। যদি সিদ্ধান্তের নামে বিরোধ সৃষ্টি হয়, তাহলে সেটি গঠনমূলক নয়, বরং বিভাজনমূলক উদ্যোগ হয়ে দাঁড়ায়।’
কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, ‘এ গণভোটের সমাধানটা কী? জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা কিন্তু নেই। মানে এক ধরনের হাওয়ার ওপরে সবকিছু চলছে। আমরা দেখলাম জুলাই সনদে স্বাক্ষর হলো। এরপর সর্বশেষ ঐকমত্য কমিশন তারা আবার আরেকটা খেলা খেলল এখানে। তারা বলছে যে নোট অব ডিসেন্ট কিছুই থাকবে না। ভিন্নমত থাকবে না। আমার তো ভিন্নমত আছে, কেন থাকবে না?’
মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘নোট অব ডিসেন্ট বা ভিন্নমত নথিভুক্ত করা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন এগুলো প্রকাশ করা হলো না? তারা বললেন, ভিন্নমতগুলো কার্যবিবরণীর অংশ, কিন্তু সিদ্ধান্তের অংশ নয়। আমি এ বিতর্কে যাচ্ছি না। শুধু এটুকু বলব, এখানে যে ধৈর্য আর রাজনৈতিক পরিপক্বতা দরকার, তা আমাদের সবার মধ্যে এখনো তৈরি হয়নি।’
নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা তো এটাই চেয়েছিলাম যে তরুণরা এ দেশকে লিড করবে। সেই তরুণদের একটা অংশ সরকারে নেতৃত্বের সুযোগ পেয়েছে। সেই ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে যারা সরকারে গেলেন, তাদের চিত্রটা কী? তারা কী করেছেন? এ এক বছরে যারা সরকারে আছেন, তাদের উদাহরণ কী?’
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল চেয়ে তাসনিম জারা বলেন, ‘আমাদের সাংসদরা জনগণের প্রতিনিধি হয়ে সংসদে গেলেও দলের বিপক্ষে ভোট দিলে তারা পদ হারান। জনগণের নয়, দলের প্রতিনিধিত্বই করতে হয় তাদের। তাই আমরা এ ধারা বাতিল চাই।’