জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে জাতীয় নির্বাচন কোনোভাবেই কার্যকর হবে না। আমাদের অবস্থান খুব পরিষ্কার- গণভোট আগে হতে হবে। না হলে এটা মূল্যহীন। এটার দুই পয়সারও মূল্য নেই।
যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে লন্ডনে যাত্রাবিরতিকালে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যেখানেই যাবে মানুষ পায় অবিচার। এ অবস্থায় এই দেশ ও জাতিকে কেউ আর দেখতে চায় না। আমরাও দেখতে চাই না। এ জন্য সবাই মিলে আমরা আমাদের দেশটা বদলাব। আমাদের সুযোগ দেন, যার যেটুকু অবদান আছে, কারও প্রতি অবিচার করব না। জামায়াত আমির বলেন, আমরা আমাদের মেনিফেস্টোতে সেগুলো ঘোষণা করব। তবে এখনই মেনিফেস্টো প্রকাশ করছি না। আমরা ইলেকশন ঘোষণার আগে মেনিফেস্টোর কিছু প্রকাশ করব না। মিথ্যা কোনো আশ্বাস জাতিকে দেব না। আমাদের মেনিফেস্টোর সঙ্গে একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনাও থাকবে। তিনি আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে বড় পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনের প্রত্যাশা ছিল- সমাজে কোনো অনিয়ম ও বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু দুর্নীতিবাজরা সমাজের সব জায়গায় বসে থাকার কারণে মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। প্রত্যেক মানুষ নিগৃহীত।
জামায়াত আমির জানান, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই অব্যাহত থাকবে এবং জামায়াত এ লড়াইয়ে সবসময় জনগণের পাশে থাকবে। একই সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার হওয়ার সময়সীমা ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যে কোনো অপরাধের বিরোধী। অপরাধী যে-ই হোক- সে সেনাবাহিনীর সদস্য হোক বা অন্য কেউ-অপরাধ করলে তাকে অপরাধী হিসেবেই দেখতে হবে।
দুর্নীতি প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দুর্নীতি এখন পাকিস্তান আমলের চেয়েও ভয়াবহ। তখন কোনো ঘুষখোর অফিসার এলে সবাই জানত। আর এখন যদি কোনো সৎ অফিসার আসে, সবাই অবাক হয়ে বলে- এই একজন মানুষ সৎ! দেখুন, অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজে দুর্নীতি যখন নিত্যদিনের অংশ হয়ে যায়, তখন সে সমাজ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বিধ্বস্ত। সর্বত্র দুর্নীতির সয়লাব। যেখানেই যাবে মানুষ পায় অবিচার। এই অবস্থায় দেশ ও জাতিকে কেউ আর দেখতে চায় না। আমরাও চাই না। আপনারাও নিশ্চয়ই দেখতে চান না।
এ সময় জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, ব্যারিস্টার নজরুল ইসলামসহ সংগঠনের আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
দীনি শিক্ষা নিয়ে সমাজ বদলের চেষ্টা করবেন : দেশের ঐতিহ্যবাহী তা‘মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের প্রথম অ্যালামনাই কনফারেন্স গতকাল চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে অনলাইনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তা‘মীরুল মিল্লাত, এক নামে যে মাদ্রাসাকে সারা দেশের মানুষ চেনে। দেশে আরও হাজারো মাদরাসা আছে কিন্তু সেগুলো এতটা জনপ্রিয় হয়নি। এখান থেকে পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীদের কাছে মাত্র দুটি বিষয় আমরা চাই। দীনি জ্ঞানার্জনে নিজেকে গড়ে তুলবেন এবং পাশাপাশি সমাজ বদলের জন্য চেষ্টা করবেন।
তিনি আরও বলেন, এই মাদ্রাসার ভাই-বোনেরা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভূমিকা রাখছেন। যেখানেই কাজ করেন, সার্থকতা খুঁজে পেতে হবে। প্রকৃত যারা দীনি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে, তারাই ভাগ্যবান।
তা‘মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. খলীলুর রহমান মাদানীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হাসান, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, শায়খ আহমাদুল্লাহ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. নকিব মো. নাসরুল্লাহ, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শামসুল আলম, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মিয়া মুহাম্মদ নূরুল হক, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান ডক্টর কামালুদ্দীন আবদুল্লাহ জাফরী, মাওলানা মোশতাক ফয়েজী, ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম, তা‘মীরুল মিল্লাত ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কুরবান আলী, গভর্নিং বডির সদস্য প্রফেসর নুরুন্নবী মানিক, আবদুর রহমান আল মাদানী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, মাদ্রাসার সাবেক প্রিন্সিপাল ড. আবু ইউসুফ প্রমুখ।