কাঠগোলাপ গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে ফোটে এমন মৃদুগন্ধ একটি ফুল গাছ। সাধারণত ৮-১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। তবে দেশের সর্ববৃহৎ এ কাঠগোলাপ গাছটি তার চেয়ে অনেক উঁচু। ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী জমিদারবাড়িতে। অবাক করা বিষয় আড়াই শ বছরের পুরোনো এ গাছটিতে এখনো কাঠগোলাপ ফোটে। কাঠগোলাপের ফুল সাধারণত বিচিত্র গড়নের। কোনো কোনো ফুল দুধের মতো সাদা, কোনোটি সাদা পাপড়ির ওপর হলুদের ছোঁয়া, আবার কোনোটি লালচে গোলাপি রঙের। আবার সাদা রঙের কিছু ফুল দীর্ঘ মঞ্জরিদণ্ডের আগায় ঝুলে থাকে। ইটাকুমারীর কাঠগোলাপগুলো সাদা ও হলুদ রঙের মিশেলে। কাঠগোলাপ দক্ষিণ ভারত, মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা, ভেনেজুয়েলার স্থানীয় ফুল। কাঠগোলাপ বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন গুলাচি, গোলাইচ, গোলকচাঁপা, চালতাগোলাপ ইত্যাদি। ইটাকুমারীর কাঠগোলাপ গাছটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ দেশের ইংরেজবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস এবং জমিদারির ঐতিহ্য। ইটাকুমারীর জমিদার শিবচন্দ্র রায় মোগল ও আধুনিক স্থাপত্যে নির্মাণ করেছিলেন রাজবাড়িটি। এখন এটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বাড়িটির পশ্চিম দিকে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি বিশাল কাঠগোলাপ গাছ। এ বিষয়ে কথা হয় ইটাকুমারী শিবচন্দ্র রায় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এবং তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও আন্দোলনের অন্যতম নেতা নজরুল ইসলাম হক্কানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অষ্টাদশ শতকের আগে কোচবিহার থেকে শিবচন্দ্রের বাবা এখানে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। জমিদার হলেও তাঁদের উপাধি ছিল রাজা। সে সময় এ গাছটি লাগিয়েছিলেন তিনি। জমিদারবাড়ির এ কাঠগোলাপটি এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতীক। এত উচ্চতার ও পুরোনো কাঠগোলাপ বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। যার কাণ্ড, লতাপাতা ও ফুল একসময় আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হতো। ১৭৮৩ সালে ব্রিটিশবিরোধী প্রজা বিদ্রোহ আন্দোলন শুরু হয়। ওই সময় রাজা শিবচন্দ্র প্রজাদের পক্ষে সে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।’ তাই ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের স্বার্থে সরকারি উদ্যোগে ইটাকুমারীর বিবর্ণ রাজবাড়িটিসহ গাছটি সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি। জমিদারবাড়ির শেষ চিহ্ন ভবনটির সঙ্গে জমিদারের স্মৃতিবিজড়িত কাঠগোলাপটি মাথা উঁচু করে সগৌরবে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইতিহাস-ঐতিহ্যপ্রেমীরা দূরদূরান্ত থেকে কাঠগোলাপটি দেখতে আসেন।
গাছটি সম্পর্কে রংপুর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমার জানা মতে এটি দেশের সর্ববৃহৎ কাঠগোলাপ। আমি একাধিকবার গাছটি দেখতে গিয়েছি। ধারণা করা হচ্ছে গাছটির বয়স আড়াই শ বছরের বেশি হবে।’