ভারতীয় ক্রিকেটের ধ্রুবতারা হতে পারতেন। শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলি, বিনোদ কাম্বলী, অজয় জাদেজারা থাকার পরও ভারতীয় ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র হতে পারেননি। তাই বলে থেমে থাকেননি অমল মজুমদার। দেশটির ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সফল ক্রিকেটার অমল ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে না পারলেও এখন ক্রিকেটার তৈরির কারিগর। ৫০ বছর বয়সি অমল পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কোচিংকে। এখন ভারতীয় নারী দলের কোচ। তার কোচিংয়ে প্রথমবার নারী বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে ভারত। নাবি মুম্বাইয়ে আজ বিশ্বকাপ ফাইনাল। বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টায় শুরু ফাইনালে অমলের শিষ্য হারমানপ্রীত কাউর, স্মৃতি মান্ধানা, জেমিমা রদ্রিগেজদের প্রতিপক্ষ লরা উলভার্ট, ননকুলুলেকো এমবালা, ক্লার্কের দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০০৫ ও ২০১৭ সালের পর তৃতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলবে ভারত। প্রথমবার ফাইনাল খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই প্রতিপক্ষের লড়াইয়ে জয়ী দল হবে নারী বিশ্বকাপের নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আগের ১২ আসরের সাতবার অস্ট্রেলিয়া, চারবার ইংল্যান্ড ও একবার নিউজিল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা দুই দল পুরুষদের সর্বশেষ টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে। গত বছরের জুনে ব্রিজটাউনের ফাইনালে ৭ রানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপে শিরোপা জিতেছিল ভারত।
দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অস্ট্র্রেলিয়া ৩৩৮ রানের আকাশসমান স্কোর সংগ্রহ করেছিল। ফিল্ডিং শেষে হারমানরা সাজঘরে ফিরলে কোনো কথা বলেননি কোচ অমল। শুধু সাদা কাগজে একটি বাক্য লিখে রেখেছিলেন- ‘অস্ট্র্রেলিয়া যে রান করেছে, তার চেয়ে ১ রান বেশি করতে হবে।’ হারমান, মান্ধানা, জেমিমারা রুমে ঢুকে দেয়ালে সাঁটানো সাদা কাগজে লেখাটা দেখেন। ওই লেখাই দলকে পাল্টে দেয়। ৩৩৯ রানের টার্গেট অনায়াসে পেরিয়ে যায় জেমিমার অবিশ্বাস্য ১২৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে। হারমানও খেলেন ৮৯ রানের অধিনায়কোচিত ইনিংস। দুজনের ১৬৭ রানের জুটি তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে টেনে তুলে ভারতকে। রেকর্ড সাতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারত ছিল ‘আন্ডারডগ’। অথচ সেমিফাইনাল জিতেছে ফেবারিটের মতো ক্রিকেট খেলে।
ভারতের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাও ‘আন্ডারডগ’ ছিল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম সেমিফাইনালে আন্ডারডগ হিসেবেই খেলতে নেমেছিল উলবার্ট বাহিনী। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৬৯ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল প্রোটিয়া নারীরা। হেরেছিল ১০ উইকেটের পাহাড়সমান ব্যবধানে। দলটি ফাইনাল খেলছে একমাত্র উলভার্টের একক পারফরম্যান্সে। সেমিফাইনালে ইংলিশদের হারিয়েছিল ১২৫ রানের পর্বতসমান ব্যবধানে। ২৬ বছর বয়সি অধিনায়ক উলভার্টের ১৬৯ রানে ভর করে দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে ৩১৯ রান করেছিল। আসরের সেরা ক্রিকেটার হওয়ার লড়াইয়ে রয়েছেন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। সবার ওপরে উলভার্ট ৮ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ৩ হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৭০ রান করেছেন।
গ্রুপ পর্বে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচে উলভার্টের ৭০ ও নাদিন ডি ক্লার্কের (৮৪*, ২/৫২) অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে ৩ উইকেটে জিতেছিল প্রোটিয়ারা। প্রথম ব্যাটিংয়ে ভারত ২৫১ রান করেছিল রিচা ঘোষের ৯৪ রানে ভর করে। পুরো আসরে আফ্রিকান দলটির ব্যাটিং ধারাবাহিকতা নেই। দলের বিপরীতে একমাত্র উলভার্ট ব্যাটিং ধারাবাহিকতার প্রতীক। দলটি অস্ট্র্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯৭ রানেও অলআউট হয়েছিল। স্বাগতিক ভারতীয় ক্রিকেটাররা ধারাবাহিক ছিলেন ব্যাটিংয়ে। সেমিফাইনালে জেমিমা বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ১২৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। অথচ দলটির মূল ব্যাটিং ভরসা সহ-অধিনায়ক স্মৃতি মান্ধানা। ৮ ইনিংসে ৩ হাফ সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ৩৮৯। জেমিমা ২৬৮, প্রাতিকা রাওয়াল ৩০৪, অধিনায়ক হারমান ২৪০ রান করেছেন। দলটির বোলিংয়ের ভরসা অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা ১৮টি, বাঁ-হাতি স্পিনার শ্রী চারাানি ১৩ উইকেট নেন। আফ্রিকান দলটির ব্যাটিংয়ের মূল ভরসা ম্যারিজান ক্যাপ ২০৪, নাদিন ডি ক্লার্ক ১৯০, ট্রাইওন ১৬৭, লুওস ১৫৮ রান করেছেন। দলটির বোলিংয়ের ভরসা ক্লার্ক নিয়েছেন ৮ উইকেট।
আজ ফাইনাল। নারী ক্রিকেটে নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার ফাইনাল। কে জিতবে? ভারত না দক্ষিণ আফ্রিকা?