সহজ এক অনলাইন মস্তিষ্ক অনুশীলন মানুষের মানসিক বার্ধক্য কমাতে পারে। নতুন এক গবেষণায় এমন প্রমাণ মিলেছে।
কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় প্রথমবারের মতো প্রমাণ মিলেছে, অনলাইনে বিশেষভাবে নকশা করা মস্তিষ্কচর্চা স্মৃতি ও শেখার ক্ষমতা উন্নত করতে পারে।
গবেষণায় ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ৯২ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক অংশ নেন। তাদের মধ্যে যারা ‘ব্রেইনএইচকিউ’ নামের এক ধরনের গেমভিত্তিক অ্যাপ ব্যবহার করেছেন, তারা ১০ সপ্তাহ পর মস্তিষ্কের ‘কোলিনার্জিক সিস্টেম’ (মনোযোগ, স্মৃতি ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত এক গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক প্রক্রিয়া)–এ উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখান।
এই কোলিনার্জিক সিস্টেম সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত এমন মানসিক অনুশীলনে এই সিস্টেম আরও সক্রিয় হয় এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা শক্তিশালী হয়।
ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞান বিভাগীয় অধ্যাপক ও গবেষণার প্রধান ড. এতিয়েন দে ভিলার-সিদানি বলেন, এই অনুশীলনের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, যা সাধারণত ১০ বছর কম বয়সী মানুষের মধ্যে দেখা যায়। মানুষের ক্ষেত্রে এ ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম এমন কোনো ওষুধ বা পদ্ধতি আগে দেখা যায়নি।
গবেষণাটি জেএমআইআর সিরিয়াস গেমস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই পদ্ধতি ওষুধের নিরাপদ বিকল্প হতে পারে কিংবা ওষুধের সঙ্গে মিলিয়েও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
এই গবেষণা প্রমাণ করে, নিয়মিত মানসিক অনুশীলন ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে। ড. সিদানি বলেন, অনেকে মনে করেন, ক্রসওয়ার্ড পাজল বা পড়াশোনাই মস্তিষ্ক সচল রাখতে যথেষ্ট। কিন্তু এগুলো সবসময় মস্তিষ্কের নতুন সংযোগ গঠনে তেমন ভূমিকা রাখে না।
ব্রেইনএইচকিউ অ্যাপটিতে গতি ও মনোযোগনির্ভর নানা খেলা থাকে, যা ব্যবহারকারীর দক্ষতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। ইতিমধ্যে শতাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এই পদ্ধতির কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে।
গবেষকেরা জানান, অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কে পরিবর্তন দেখতে তারা বিশেষ ধরনের ‘পিইটি স্ক্যান’ (Positron Emission Tomography Scan) ব্যবহার করেন, যা মস্তিষ্কের কোলিনার্জিক ক্রিয়াকলাপ দৃশ্যমান করে। ড. সিদানি বলেন, এই পরীক্ষার প্রযুক্তি খুব বিরল, পৃথিবীর অল্প কয়েকটি কেন্দ্রেই এটি করা সম্ভব।
বিজ্ঞানীরা এখন ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ের রোগীদের ওপর একই ধরনের গবেষণা চালানোর পরিকল্পনা করছেন, যাতে দেখা যায় এই অনুশীলন চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে কি না।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল