কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র টানেল। মেগা প্রজেক্টের নামে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ টানেল এখন গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৫ সালে টানেল দিয়ে প্রায় ২০ হাজার যানবাহন চলাচলের কথা ছিল। কিন্তু চলছে দৈনিক মাত্র ৩ হাজার ৮৭০টি, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ গুণ কম। ২৮ অক্টোবর টানেলটি দুই বছর পার করলেও এখনো ব্যয়ের তুলনায় আয় সর্বনিম্ন। সংশ্লিষ্টদের দাবি, টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হলেও উভয় পাশে প্রস্তাবিত একাধিক সংযোগ-বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়নি; যার কারণে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় যানবাহনের চলাচল কম। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাধায়ক প্রকৌশলী (মনিটরিং) মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, কর্ণফুলী টানেল ঘিরে নানামুখী অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখনো শেষ হয়নি। সরকারি একাধিক সংস্থা টানেল ঘিরে অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ শুরু করেছে। দুই বছরের মধ্যে চলতি বছরে টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচলে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। তা ছাড়া টানেলের দৈনিক ব্যয় কমিয়ে আনার কারণেও আয়ব্যয়ের পার্থক্য কমে এসেছে। দুই বছরে প্রাক্কলন অনুযায়ী যানবাহন না চললেও সরকারি একাধিক সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ধীরে ধীরে টানেল লাভজনক হয়ে উঠবে।
টানেল কর্তৃপক্ষের ২৬ অক্টোবরের তথ্য বলছে, বাণিজ্যিকভাবে চলাচল শুরুর পর এ পর্যন্ত ২৮ লাখ ২১ হাজার ৩৭৬টি যানবাহন চলাচল করেছে। এ হিসেবে দৈনিক যানবাহন চলাচলের হার ৩ হাজার ৮৭০টি। যদিও সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে দৈনিক ১৯ হাজার ৬৬৯টি যানবাহন চলাচলের কথা। অর্থাৎ প্রাক্কলনের চেয়ে ৫ গুণ কম যানবাহন চলাচল করছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত এ টানেলটি দিয়ে। এদিকে দুই বছরে টানেল থেকে আয় হয়েছে ৮০ কোটি ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৩০০ টাকা। গড়ে প্রতিদিন ১০ লাখ ৯৮ হাজার ১৮১ টাকা। যদিও দীর্ঘদিন পর্যন্ত টানেল পরিচালনায় দৈনিক ব্যয় ছিল ৩৭ লাখ টাকার বেশি। প্রতিদিন গড়ে ১০ লাখ টাকার কিছু বেশি আয় হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে রয়েছে সেতু বিভাগ। এ কারণে জনবলসহ বিভিন্ন খাতের খরচ কমিয়ে টানেলের দৈনিক ব্যয় নামিয়ে আনা হয়েছে ২২ লাখ টাকায়। তবে টানেলের আনোয়ারা প্রান্তসহ সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শতভাগ বাস্তবায়ন না হলে টানেলের লোকসান এড়িয়ে লাভ হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বিবিএ কর্তৃপক্ষ। বিবিএ কর্তৃপক্ষ টানেল থেকে কাক্সিক্ষত রাজস্ব না আসার একাধিক কারণ উল্লেখ করেছে। তার মধ্যে টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হলেও উভয় পাশে প্রস্তাবিত একাধিক সংযোগ সড়ক, বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। আবার দেশের সব বড় সেতু, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায় সব যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু অতি নিরাপত্তার কারণে টানেল দিয়ে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, থ্রি-হুইলারের মতো ছোট যানবাহন চলাচল করে না। এ কারণে বড় অবকাঠামোগুলোর মধ্যে টানেলের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যানবাহনের চলাচল কম।