প্রায় পাঁচ দশক আগে ১৯৭২ সালে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর রক্তে দেখা যায় অদ্ভুত এক ঘাটতি তার রক্তের লাল কণিকাগুলিতে ছিল না এমন এক অ্যান্টিজেন, যা তৎকালীন সময়ে সকল পরিচিত মানব রক্তে থাকা আবশ্যিক বলে ধরা হতো।
দীর্ঘ গবেষণার পর, ২০২৪ সালে যুক্তরাজ্য ও ইসরায়েলের একদল গবেষক সেই রহস্যের সমাধান করেন এবং মানুষের শরীরে নতুন এক রক্ত গ্রুপ সিস্টেমের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেন। নতুন এই রক্ত গ্রুপের নামকরণ করা হয়েছে এমএএল।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের হেমাটোলজিস্ট ড. লুইস টিলি জানান, এই আবিষ্কার শুধু এক বিশাল অর্জনই নয় বরং কয়েক দশকের এক নিবেদিত গবেষণার ফল। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে এই রক্তের রহস্য নিয়ে কাজ করে আসছিলেন।
মানুষের রক্তের পরিচিত এবিও এবং আরএইচ ফ্যাক্টরের বাইরেও রয়েছে আরও অনেক অজানা রক্ত গ্রুপ সিস্টেম, যা নির্ধারিত হয় লাল রক্ত কণিকার উপর থাকা প্রোটিন ও শর্করার মাধ্যমে। এমএএল রক্ত গ্রুপের মূল অ্যান্টিজেন নামে পরিচিত, যা ৯৯.৯ শতাংশ মানুষের দেহে স্বাভাবিকভাবেই থাকে।
কিন্তু এমএএল নামক একটি ক্ষুদ্র প্রোটিন যদি রূপান্তরিত হয়, তাহলে অ্যান্টিজেন অনুপস্থিত থেকে যায়। তখনই গঠিত হয় এমএএল নেগেটিভ রক্তের ধরন।
গবেষকেরা দেখতে পান, কিছু রোগীর এমএএল জিনে উভয় কপিতেই মিউটেশন থাকলে এমন রক্তের ধরন তৈরি হয়। আবার কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এই অ্যান্টিজেন অস্থায়ীভাবে অনুপস্থিত থাকে রক্তজনিত অন্যান্য রোগের কারণে।
এমএএল প্রোটিন মূলত কোষ ঝিল্লির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং কোষ পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় আরও দেখা যায়, এই অ্যান্টিজেন নবজাতকদের শরীরে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে থাকে না বরং কিছুদিন পর গঠিত হয়।
বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে প্রমাণ করেন, যদি এমএএল নেগেটিভ রক্তকোষে একটি সুস্থ এমএএল জিন প্রবেশ করানো হয়, তবে সেখানে আবার অ্যান্টিজেন গঠন হয়—যা এই রক্ত গ্রুপ সিস্টেমের অস্তিত্বকে নিশ্চিত করে।
এই আবিষ্কারের ফলে এখন এমএএল রক্ত গ্রুপ শনাক্তকরণ সম্ভব, এবং রোগী এমএএল নেগেটিভ কিনা তা বোঝা যাবে—এবং সেটা জিনগত নাকি কোনো রোগজনিত কারণে তা চিহ্নিত করা যাবে।
দুর্লভ হলেও এই ধরনের রক্ত গ্রুপের প্রভাব ট্রান্সফিউশনে মারাত্মক হতে পারে। উপযুক্ত মিল না হলে প্রাণহানিও ঘটতে পারে। তাই এমএএল রক্ত গ্রুপের এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে বহু জীবন বাঁচাতে সহায়ক হবে।
সূত্র: সায়েন্স এলার্ট
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল