জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ড থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দিয়ে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, হাই কোর্ট ও অধস্তন আদালত এ মামলায় তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে নয়, বরং অনুমাননির্ভর ধারণা এবং অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে রায় দিয়েছেন। আপিল বিভাগের রায়ে আরও বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে মামলাটি করেছে। এই ট্রাস্ট ছিল ব্যক্তিমালিকানাধীন। সংশ্লিষ্ট পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ দাখিল করা হয়নি।
গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ের ৫৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গতকাল সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। রায়টি প্রধান বিচারপতি নিজেই লিখেছেন এবং অন্য বিচারপতিরা তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, এ মামলা পরিচালনায় ইচ্ছাকৃতভাবে আইন অপব্যবহারের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, যা ‘বিদ্বেষমূলক বিচার প্রক্রিয়া’ হিসেবে গণ্য। যারা আপিল করেননি, রায়টি তাদের জন্যও প্রযোজ্য হবে। এতে তাদের সম্মান পুনরুদ্ধার এবং নির্দোষ নিশ্চিত করা হয়েছে। রায়ে আরও বলা হয়েছে, জামিনে থাকা সব আসামি তাদের জামিনের শর্ত থেকে অব্যাহতি পাবেন। কর্তৃপক্ষকে দ্রুত এ আদেশ কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়ার আপিল খারিজ করে সাজা ১০ বছর বাড়িয়ে হাই কোর্ট রায় দিয়েছিলেন ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ বেগম জিয়া পৃথক দুটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন। গত বছরের ১১ নভেম্বর আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল মঞ্জুর ও সাজার রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে আদেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক আপিল করেন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া ১০ বছর কারাদণ্ড বহাল রেখে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ গত বছর পৃথক আপিল করেন। খালেদা জিয়ার আপিলের ওপর ৭ জানুয়ারি শুনানি শুরু হয়। চার দিন শুনানি শেষে গত ১৫ জানুয়ারি রায় দেন আপিল বিভাগ। তারেক রহমান আপিল না করলেও সব আসামি খালাস পাওয়ায় রায়ের সুবিধা পেয়েছেন তিনি।
আদালতে আপিলের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল ও আইনজীবী কায়সার কামাল। কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ ও অনীক আর হক। দুদকের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী আসিফ হাসান।