আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, দলের চট্টগ্রাম মহানগর আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় গণসংযোগের সময় চট্টগ্রাম মহানগরের পূর্ব বায়েজিদের চালিতাতলী এলাকায় দুর্বৃত্তের গুলিতে তিনি আহত হন। এ সময় সরোয়ার হোসেন বাবলা (৪৩) ও শান্ত নামে আরও দুজন গুলিবিদ্ধ হন। এর মধ্যে বাবলা মারা গেছেন। পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন, বাবলা পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। রাজনৈতিক পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও তাঁর বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় খুন, চাঁদাবাজি, হত্যাসহ ডজনের বেশি মামলা রয়েছে।
বিএনপি নেতা-কর্মী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে এরশাদ নেতা-কর্মী নিয়ে গণসংযোগে বের হন। সন্ধ্যার আগে চালিতাতলীতে একটি সভা শেষ করে মাগরিবের নামাজ পড়েন। মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা উপর্যুপরি গুলি চালাতে থাকে। এতে এরশাদ, সরোয়ার এবং পাঁচলাইশ থানার ৩ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শান্ত গুলিবিদ্ধ হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীরা আগে থেকেই গণসংযোগের বহরে ঢুকে গিয়েছিল। একপর্যায়ে আচমকা এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই সরোয়ার মারা যান।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান এ ঘটনায় জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে বলেন, ‘গণসংযোগকালে আচমকা কিছু সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। এতে এরশাদ উল্লাহ পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আমরা ধারণা করছি এ ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের সম্পৃক্ততা রয়েছে।’
এদিকে এরশাদ উল্লাহর ওপর হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এবং বোয়ালখালীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এরশাদ উল্লাহ আশঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে। তবে শান্তর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে নেতা-কর্মীরা চিকিৎসকদের বরাতে জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘এরশাদ উল্লাহ নির্বাচনি প্রচারে ছিলেন। সেখানেই উনিসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে সরোয়ার নামে একজন মারা গেছেন। বাকিরা চিকিৎসাধীন। কে বা কারা কী কারণে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যথাসময়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঘটনার সময় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে একটি সেমিনারে বক্তব্য দিচ্ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘তারা (কারও নাম উল্লেখ না করে) একটি অচলাবস্থা সৃষ্টি করে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চায়। এগুলো হবে। ধৈর্য হারাবেন না। শক্ত থাকবেন। মনোবল শক্ত রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
মির্জা ফখরুলের উদ্বেগ : গণসংযোগকালে চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহসহ তিনজনকে গুলির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সন্ধ্যায় এক বিবৃতির মাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন, অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর দুষ্কৃৃতকারীরা আবারও দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ নৈরাজ্যের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। দুষ্কৃৃতকারীদের নির্মম হামলায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত এরশাদ উল্লাহসহ আরও একাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধের ঘটনা সেই অপতৎপরতারই নির্মম বহিঃপ্রকাশ। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তাই এসব দুষ্কৃতকারীদের কঠোর হস্তে দমনের বিকল্প নেই। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় দল, মত নির্বিশেষে সব শ্রেণিপেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নইলে ওতপেতে থাকা দুষ্কৃতকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে মরিয়া হয়ে উঠবে।