রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা হয়েছিল। একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দিতেই এটি করা হয়। তিনি বলেন, আদালতে ঘোষিত রায় বদলে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানো প্রশ্নে শুনানিতে তিনি একথা বলেন। পরে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিচারপতি খায়রুল হক ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় ঘোষণার সময় সংক্ষিপ্ত আদেশে বলেছিলেন পরবর্তী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে। কিন্তু পূণার্ঙ্গ রায়ে এটা বদলে ফেলেন তিনি। এই রায় বদলে ফেলাটা উন্মুক্ত আদালতে ঘোষিত রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
শুনানিতে আসাদুজ্জামান বলেন, কোনো রায় পরিবর্তন করতে হলে মামলার পক্ষদের রিভিউ আবেদনে বা আদালতকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রিভিউ করতে হয়। কিন্তু বিচারপতি খায়রুল হক এ পথে না গিয়ে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অবসরের ১৬ মাস পর রায় পরিবর্তন করেন, যা আইন সিদ্ধ নয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই উনি এ কাজটি করেন। এভাবে রায় বদলে ফেলা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। রায় বদলে ফেলায় গত দেড় দশকে জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে, বিপুল সংখ্যক মানুষ গুম, খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। প্রায় ৭০ লাখের মতো মানুষ মিথ্যা গায়েবি মামলার আসামি হয়েছেন।
সর্বোচ্চ আদালতকে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর পর দেশের গণতন্ত্র সুসংহত হয়েছিল। জনগণ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছিল। তিনি বলেন, সংবিধান একটি রাজনৈতিক দলিল। গণতন্ত্র যদি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ হয় তাহলে গণতন্ত্রকে শানিত করতে যে কোনো পদক্ষেপই মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত হবে।
১৪ বছর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দিয়েছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। পরে এ রায় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রায় পরিবর্তনের অভিযোগ ওঠে।
জুলাই অভ্যুত্থানে গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৪ বছর আগের বিতর্কিত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে গত বছর ২৭ আগস্ট আবেদন করেন ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ ব্যক্তি।
পরে ১৭ অক্টোবর আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর পাঁচ দিন পর ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এ ছাড়া আরেকটি আবেদন করেন নওগাঁর রানীনগরের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন। এরপর আরও দুটি আবেদন করা হয়।
রিভিউ আবেদনে আপিল করার অনুমতি দিয়ে আপিল শুনানি হবে, নাকি রিভিউ আবেদনেই চূড়ান্ত শুনানি হবে, এ নিয়ে দুই দিন শুনানির পর গত ২৭ আগস্ট সর্বোচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত জানান। ছয়টি আবেদনের মধ্যে একটি আবেদনে আপিলের অনুমতি দিয়ে চারটি আবেদন এর সঙ্গে যুক্ত করে দেন আপিল বিভাগ। অন্য আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে শুনানির জন্য রেখেছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। সেই ধারাবাহিকতায় গত ২১ আগস্ট শুনানি শুরু হয়।