শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল হলেও গ্রাহকসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর পেমেন্ট, রেমিট্যান্স ও এলসিসহ সব ধরনের স্বাভাবিক কার্যক্রম আগের মতোই চলবে। প্রশাসকরা দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ধাপে প্রত্যেক আমানতকারীকে আমানত সুরক্ষা তহবিল থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হবে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর এ সিদ্ধান্তের বিস্তারিত জানান। অনুষ্ঠানে গভর্নর জানান, চলতি মাসের শেষ নাগাদ একীভূত ব্যাংকগুলোর আমানতকারীরা পর্যায়ক্রমে টাকা তুলতে পারবেন। গভর্নর বলেন, বোর্ড বাতিল হলেও ব্যাংকগুলোর দৈনন্দিন ব্যাংকিং বন্ধ হবে না। ব্যবসা অব্যাহত থাকবে। পেমেন্ট, রেমিট্যান্স, এলসিহ সব স্বাভাবিকভাবে চলবে।
তিনি জানান, পাঁচ ব্যাংকের ৭৫০টির বেশি শাখা ও ৭৫ লাখ আমানতকারী রয়েছে। তাদের স্বার্থরক্ষায় প্রথম ধাপেই কাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত একীভূতকরণ শুরু হয়েছে। গ্রাহকের লেনদেন যাতে স্বাভাবিক থাকে, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসকদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শেয়ারহোল্ডারদের বিষয়ে গভর্নর ড. মনসুর বলেন, পাঁচ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার যৌক্তিক মূল্যায়নে দেখা গেছে, ইকুইটির মূল্য বর্তমানে নেগেটিভ। ফলে শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার শূন্য (জিরো) ধরা হবে এবং কাউকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।
তিনি আরও স্পষ্ট বলেন, যাদের অপকর্মে ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এস আলমসহ তারা আর কখনো ফিরে আসতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, পাঁচটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। গতকাল সকালেই ব্যাংকগুলোকে ‘নন-ভায়েবিলিটি নোটিস’ পাঠানো হয়, যার মাধ্যমে তাদের বোর্ড অকার্যকর হয়ে যায়। এখন থেকে এসব ব্যাংক ব্যাংক রেজ্যুলুশন অধ্যাদেশের আওতায় পরিচালিত হবে। ড. মনসুর বলেন, পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে হবে দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক। নতুন সমন্বিত ব্যাংকের পেইড-আপ ক্যাপিটাল হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা যা দেশের যে কোনো ব্যাংকের তুলনায় সর্বোচ্চ।
পাঁচ ব্যাংকে দায়িত্ব নিতে প্রশাসকদের নামও চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সূত্র জানায়, এক্সিম ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শওকাতুল আলম, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সালাহ উদ্দিন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে পরিচালক মো. মুকসুদুজ্জামান ও ইউনিয়ন ব্যাংকে প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত আমানত ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা, আর ঋণ ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ৭৬ শতাংশ খেলাপি। সবচেয়ে বেশি খেলাপি ইউনিয়ন ব্যাংকের ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৬২ দশমিক ৩০ শতাংশ ও এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ। নতুন একীভূত ব্যাংকটি সরকার মালিকানাধীন হলেও বেসরকারি ব্যাংকের মতো পেশাদার ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে। পৃথক শরিয়াহ বোর্ড, বাজারভিত্তিক বেতন কাঠামো ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিয়োগের কথা জানানো হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সিদ্ধান্তটি পরিবর্তন হতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, এটি দেশের স্বার্থে নেওয়া সিদ্ধান্ত। সরকার পরিবর্তনেও সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত থাকবে। তিনি আরও জানান, প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে একীভূতকরণ কিংবা পুনর্গঠনের আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।