সূর্যের অতিরিক্ত তাপের রহস্য উন্মোচনে বিজ্ঞানীরা এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন। তারা প্রথমবারের মতো সূর্যের বাইরের স্তর ‘করোনা’-তে অদৃশ্য চৌম্বক তরঙ্গ—‘আলফভেন ওয়েভ’ সরাসরি শনাক্ত করেছেন। এই তরঙ্গগুলো সূর্যের অভ্যন্তরের গতিবিধি থেকে সৃষ্টি হয়ে বাইরের স্তরে শক্তি স্থানান্তর করে। ফলে সূর্যের বাইরের স্তরটি তার পৃষ্ঠের তুলনায় কয়েক মিলিয়ন ডিগ্রি বেশি গরম থাকে।
এই পর্যবেক্ষণটি করা হয়েছে হাওয়াই দ্বীপে অবস্থিত ড্যানিয়েল কে. ইনোয়ে সোলার টেলিস্কোপ-এর মাধ্যমে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌর টেলিস্কোপ।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন যুক্তরাজ্যের নর্থামব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড মর্টন। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, টেলিস্কোপটির উন্নত প্রযুক্তি ক্রায়োজেনিক নিয়ার ইনফ্রারেড স্পেক্ট্রোপোলারিমিটার ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা সূর্যের উত্তপ্ত প্লাজমার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পাকানো গতিবিধি শনাক্ত করতে সক্ষম হন।
অধ্যাপক মর্টন বলেন, এটি বহু দশকের গবেষণার পর হারিয়ে যাওয়া সংযোগটি খুঁজে পাওয়ার মতো। গবেষণাটি আন্তর্জাতিক সাময়িকী নেচার অ্যাস্ট্রোনমি-তে প্রকাশিত হয়েছে।
১৯৪২ সালে প্রথম আলফভেন তরঙ্গের ধারণা দেন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী হানেস আলফভেন। তিনি দেখিয়েছিলেন, এই তরঙ্গ চৌম্বক ক্ষেত্রের ভেতর দিয়ে গিটার তারের কম্পনের মতো চলাচল করে। এতদিন বড় সৌরঝড়ের সময় এসব তরঙ্গের অস্তিত্ব দেখা গেলেও, এবার প্রথমবার বিজ্ঞানীরা সূর্যের নিয়মিত পরিবেশে ক্ষুদ্র ও স্থায়ী এই ‘টর্শনাল আলফভেন ওয়েভ’ সরাসরি শনাক্ত করেছেন।
গবেষকেরা বলেন, নতুন বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে তারা সূর্যের প্লাজমার অন্যান্য গতির সঙ্গে এই তরঙ্গের প্রভাব আলাদা করে শনাক্ত করেন। এতে লাল ও নীল রঙের পরিবর্তন দেখা যায়, যা তরঙ্গগুলোর পৃথিবীর দিকে ও বিপরীত দিকে গতির ইঙ্গিত দেয়।
এই আবিষ্কার সূর্যের করোনার মিলিয়ন-ডিগ্রি তাপমাত্রা ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করছে এবং সূর্য থেকে নির্গত সৌর বায়ুর উৎপত্তি সম্পর্কেও নতুন ধারণা দিচ্ছে। যুক্তরাজ্য, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত এই আন্তর্জাতিক গবেষণা ভবিষ্যতের সৌরশক্তি গবেষণা ও মহাকাশ আবহাওয়ার পূর্বাভাসের নির্ভুলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল