নাসা চলতি বছরের ১ জুলাই ঘোষণা দেয়, তারা এক রহস্যময় আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূমকেতু থ্রি-আই/অ্যাটলাস আবিষ্কার করেছে। এটি এখন পর্যন্ত সৌরজগতের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করা মাত্র তৃতীয় এমন বস্তু। এর উৎস ও গঠন নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
ধূমকেতুটি বর্তমানে সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে পৌঁছাতে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি ২৯ থেকে থ্রি৩০ অক্টোবরের মধ্যে সূর্যের নিকটতম বিন্দুতে পৌঁছাবে। নাসা জানিয়েছে, এই ধূমকেতুটি পৃথিবীর জন্য কোনো ঝুঁকি নয়।
বেশিরভাগ বিজ্ঞানী মনে করেন, এটি প্রাকৃতিক বস্তু। তবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যাভি লোয়েব মনে করেন, এর কিছু বৈশিষ্ট্য এতটাই অস্বাভাবিক যে, এটি কৃত্রিম উৎসেরও হতে পারে। সম্ভবত কোনো ভিনগ্রহী প্রযুক্তির অংশও হতে পারে। যেসব কারণে বিজ্ঞানীদের কাছে থ্রি-আই/অ্যাটলাস রহস্যময়-
রাসায়নিক গঠন
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ধূমকেতুটি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় চার গ্রাম নিকেল নিঃসরণ করছে, অথচ এতে লোহা নেই। সাধারণত নিকেল ও লোহা একসঙ্গে পাওয়া যায়। এটি ধূমকেতুর স্বাভাবিক রাসায়নিক গঠন নয়।
নিকেল টেট্রাকার্বনাইল
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ধূমকেতুতে রয়েছে নিকেল টেট্রাকার্বনাইল একটি যৌগ যা পৃথিবীতে কেবল শিল্প প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। বিশেষ করে ধাতু পরিশোধনের সময়। লোয়েবের মতে, এটি কৃত্রিমভাবে নির্মিত উপাদানের উপস্থিতির ইঙ্গিত দিতে পারে।
সূর্যের বিপরীতমুখী লেজ
শুরুর পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ধূমকেতুর লেজ সূর্যের দিকেই নির্দেশ করছে যা স্বাভাবিক নিয়মের উল্টো। তবে সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, লেজের দিক এখন সূর্য থেকে বিপরীত দিকে। লোয়েব মনে করেন, এটি নিয়ন্ত্রিত গতিবিধি বা চালনার ইঙ্গিতও হতে পারে।
কক্ষপথ ও গতি
থ্রি-আই/অ্যাটলাসের কক্ষপথ হাইপারবোলিক অর্থাৎ এটি সূর্যের মাধ্যাকর্ষণে বাঁধা নয়। এটি সৌরজগতের বাইরে থেকে এসেছে এবং সূর্যের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে আবার চলে যাবে।
পৃষ্ঠের গঠন
লোয়েবের ধারণা, ধূমকেতুর পৃষ্ঠে যে ধরনের উপাদান রয়েছে, তা প্রাকৃতিক বস্তু থেকে আলাদা। এমন বিশাল আকারের কোনো পাথরমুক্ত বস্তু আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশে পাওয়া বিরল ঘটনা।
বিশাল আকার ও গতি
থ্রিআই/অ্যাটলাসের আকার প্রায় ১২ মাইল (প্রায় ১৯ কিলোমিটার) বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি ঘণ্টায় ১ লাখ ৩০ হাজার মাইল বেগে মহাশূন্যে ছুটছে যা সাধারণ ধূমকেতুর তুলনায় অনেক দ্রুত।
কৃত্রিম উপাদানের মিল
ধূমকেতুর গঠন ও নির্গত পদার্থ এমন সব যৌগের মতো, যা সাধারণত ধাতু পরিশোধন ও শিল্পকাজে ব্যবহৃত হয়। এ কারণেই লোয়েব মনে করেন, এতে প্রকৌশলগত উপাদানের উপস্থিতি থাকতে পারে।
এরপর কী হতে পারে
থ্রিআই/অ্যাটলাসের সূর্যের কাছাকাছি যাত্রা বিজ্ঞানীদের জন্য এক বিরল সুযোগ তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে তারা ধূমকেতুর প্রকৃত উৎস ও গঠন সম্পর্কে আরও নির্ভুল ধারণা পেতে পারেন। বর্তমানে নাসার ‘সাইক’ ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার ‘জুস’ মহাকাশযানসহ বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ মিশন এটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এসব তথ্য থেকে শুধু থ্রি-আই/অ্যাটলাস নয়, আমাদের সৌরজগতের উৎপত্তি সম্পর্কেও নতুন আলোকপাত পাওয়া যেতে পারে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল