আপনার হৃদয়ের জন্য যা ভালো, তা আপনার মস্তিষ্কের জন্যও ভালো হতে পারে। সম্প্রতি প্রায় ১০ লাখ অংশগ্রহণকারীর ওপর করা বিস্তৃত মেটা-বিশ্লেষণে জানা গেছে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো শুধু হৃদরোগের ঝুঁকিই কমায় না, এটি ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি কমাতেও কার্যকর হতে পারে।
এই ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে স্ট্যাটিনস এবং এজেটিমাইব'র মতো সাধারণত কোলেস্টেরল কমানোর জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলো আমাদের মস্তিস্কগত স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী হতে পারে।
ব্রিটেনের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডেনমার্কের কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের গবেষকদের পরিচালিত এই গবেষণাটি 'খারাপ' কোলেস্টেরল, যা লো-ডেন্সিটি লাইপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল নামে পরিচিত এবং ডিমেনশিয়ার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী পূর্ববর্তী গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
গবেষকরা তাদের প্রকাশিত নিবন্ধে লেখেন, বর্তমান তথ্য ইঙ্গিত করে যে জীবনের প্রথম দিকে কোলেস্টেরল কমালে পরবর্তী জীবনে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই গবেষণাটি প্রচলিত পদ্ধতিতে ওষুধ গ্রহণকারী ব্যক্তিদের ট্র্যাক করেনি। এর পরিবর্তে, গবেষকরা মেনডেলিয়ান র্যান্ডমাইজেশন নামে পরিচিত একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এই পদ্ধতিতে, তারা এমন জেনেটিক বৈচিত্র্য বা জিনগত পরিবর্তন ব্যবহার করেছেন যা স্বাভাবিকভাবেই শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রাখে। এটিকে তারা দীর্ঘকাল ধরে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবনের একটি প্রতিনিধি হিসেবে ধরে নিয়েছেন।
জেনেটিক্স বা বংশাণুগত কারণগুলো তুলনা করার একটি বড় সুবিধা হলো এটি খাদ্য এবং ব্যায়ামের মতো অন্যান্য জীবনযাত্রার প্রভাবগুলোকে বাদ দেয়, যা নির্ভুলভাবে পরিমাপ করা কঠিন।
গবেষক দল দেখতে পেয়েছেন যে যাদের জিনগতভাবে কম কোলেস্টেরল রয়েছে, তাদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এর থেকে বোঝা যায় যে, কোলেস্টেরল কম রাখা জিনগত পথকে প্রভাবিত করে, এবং এই পথগুলি ডিমেনশিয়ার সম্ভাবনাকেও প্রভাবিত করে।
গবেষকরা মনে করেন, এথেরোসক্লেরোসিস অর্থাৎ রক্তনালীতে চর্বিযুক্ত কোলেস্টেরল জমার ফলে সৃষ্ট ব্লকেজ সম্ভবত এই সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এটি মস্তিষ্কের ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। আমরা জানি যে কিছু ধরণের ডিমেনশিয়া মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহ না পাওয়ার সমস্যার কারণে ঘটে।
গবেষকরা এখন দীর্ঘমেয়াদী ক্লিনিকাল ট্রায়ালে প্রবেশের আশা করছেন। যেখানে এই কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধগুলি অংশগ্রহণকারীদের দেওয়া হবে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হবে, যাতে এই গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্রটি নিশ্চিত করা যায়।
সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট
বিডি প্রতিদিন/নাজমুুল