একসময় সৌরজগতের নবম গ্রহ হিসেবে পরিচিত ছিল প্লুটো। ১৯৩০ সালে এর আবিষ্কার মহাকাশবিজ্ঞানে এক নতুন অধ্যায় খুলে দেয়। দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে প্লুটোকেই সৌরজগতের শেষ সীমানার প্রতীক মনে করা হতো। কিন্তু ২০০৬ সালের আগস্টে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ইউনিয়ন এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয় যার ফলে প্লুটো তার গ্রহের মর্যাদা হারায়। এটা ‘বামন গ্রহ’ হিসেবে নতুনভাবে শ্রেণিবদ্ধ হয়।
চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে অনুষ্ঠিত সেই সম্মেলনেই প্রথমবার আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়। বিজ্ঞানীরা জানান, কোনো বস্তু গ্রহ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে—সেটি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করবে, নিজস্ব মহাকর্ষ বলের কারণে প্রায় গোলাকার আকার ধারণ করবে এবং নিজের কক্ষপথের আশেপাশের সব বস্তুর ওপর মহাকর্ষীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
প্লুটো প্রথম দুটি শর্ত পূরণ করলেও তৃতীয় শর্তে ব্যর্থ হয়। কারণ, এটি নিজের কক্ষপথে অন্য বস্তুর ওপর মহাকর্ষীয় প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
বিজ্ঞানীদের মতে, প্লুটো সূর্যের বাইরে কুইপার বেল্ট অঞ্চলে অবস্থান করছে। সেখানে বরফ ও শিলাযুক্ত ছোট ছোট বস্তুর ভিড়। প্লুটোর ভর তার কক্ষপথের অন্যান্য বস্তুর তুলনায় অনেক কম, ফলে সে অঞ্চলে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, পৃথিবী নিজের কক্ষপথে প্রায় সব বস্তুর ওপর মহাকর্ষীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, কিন্তু প্লুটো তা পারেনি।
যেসব মহাজাগতিক বস্তু প্রথম দুটি শর্ত পূরণ করে কিন্তু তৃতীয় শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়, সেগুলোকে ‘বামন গ্রহ’ বলা হয়। বর্তমানে প্লুটোর পাশাপাশি এরিস, সেরেস, হাউমেয়া ও মেকেমেকে এই শ্রেণিতে রয়েছে।
এই শ্রেণিবিন্যাস জ্যোতির্বিজ্ঞানকে আরও সুনির্দিষ্ট করেছে এবং সৌরজগতের গঠন সম্পর্কে বোঝাপড়া সহজ করেছে। যদিও প্লুটো এখন আর পূর্ণাঙ্গ গ্রহ নয়, তবুও এটি এখনো জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের গবেষণায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বামন গ্রহ হিসেবে বিবেচিত।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল