প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে চুরি হওয়া গয়নার দাম ৮৮ মিলিয়ন ইউরো বলে জানিয়েছেন ফরাসি প্রসিকিউটর। প্রসিকিউটর লর বেকো বলেন, ‘এ পরিমাণ অর্থ অনেক, তবে এর চেয়েও বড় ক্ষতি হয়েছে ফ্রান্সের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের।’
জানা গেছে, চুরি যাওয়া ঐতিহাসিক বস্তুগুলোর মধ্যে রয়েছে নেপোলিয়নের স্ত্রীকে উপহার দেওয়া হীরা ও পান্নার নেকলেস, নেপোলিয়ন তৃতীয়ের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী ইউজেনির ব্যবহৃত টায়ারা এবং রানী মেরি-আমেলির মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি গয়না। যেগুলোর ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। রবিবার সকালে লুভর জাদুঘর খোলার কিছুক্ষণ পরই পাওয়ার টুল ব্যবহার করে ডাকাতরা আট মিনিটেরও কম সময়ে পুরো অভিযানে সফল করে।
দুই দিনের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো ডাকাতরা ধরা না পড়ায় বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, চুরি হওয়া গয়নাগুলো ইতোমধ্যেই বাজারে বিক্রি বা গলিয়ে ফেলা হতে পারে।
বেকো জানান, গয়নার আনুমানিক মূল্য প্রকাশের উদ্দেশ্য হলো ডাকাতরা যেন গয়নাগুলো নষ্ট না করে-সে বিষয়ে তাদের ‘দ্বিতীয়বার ভাবতে’ বাধ্য করা। যদি তারা এই গয়নাগুলো গলানোর মতো নির্বুদ্ধিতা করে, তাহলে তারা প্রকৃত অর্থে সম্পূর্ণ লাভ পাবে না।
তদন্তে জানা গেছে, ডাকাতরা পালানোর সময় সম্রাজ্ঞী ইউজেনির একটি ক্ষতিগ্রস্ত মুকুট ফেলে যায়। চোরেরা চারজন মুখোশধারী এবং তারা যান্ত্রিক লিফটযুক্ত ট্রাক ব্যবহার করে সাইন নদীর পাশে অবস্থিত গ্যালেরি দ’অ্যাপোলোতে প্রবেশ করে। দুইজন কাচ কেটে প্রথম তলায় ঢোকে এবং ভেতরে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের হুমকি দেখিয়ে পুরো ভবন খালি করতে বাধ্য করে।
চোরেরা জাদুঘরের বাইরে তাদের ব্যবহৃত গাড়িটিতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেছিল, তবে লুভরের এক কর্মীর দ্রুত হস্তক্ষেপে তা ঠেকানো যায়। এরপর দেখা যায়, তারা স্কুটার চড়ে পালিয়ে যান।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই ডাকাতিকে ‘ফ্রান্সের ঐতিহ্যের ওপর আঘাত’ বলে বর্ণনা করেছেন।
ঘটনার পর দেশের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কারণ প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, লুভরের প্রতি তিনটি কক্ষের একটিতে সিসিটিভি ছিল না এবং ঘটনার সময় জাদুঘরের অ্যালার্ম সিস্টেমও সক্রিয় হয়নি।
জাস্টিস মিনিস্টার জেরাল্ড ডারমানিন বলেন, ‘নিরাপত্তা প্রটোকল ‘ব্যর্থ’ হয়েছে এবং চোরেরা ট্রাক নিয়ে সরাসরি মিউজিয়ামে প্রবেশ করতে পারায় ফ্রান্সের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চোরেরা পেশাদার দল। তারা খুব দ্রুত ও সুসংগঠিতভাবে কাজ করেছে।’
সূত্র: বিবিসি
বিডি-প্রতিদিন/আশফাক