আন্দোলনের মুখে সরকারের তরফে বাড়িভাড়া মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পর আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। গতকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন তাঁরা। এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয় বাড়িভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। বাড়িভাড়া বাড়ানোর আদেশের কপি আন্দোলনকারী শিক্ষকনেতাদের হাতে তুলে দেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। সরকারি সিদ্ধান্তের এক প্রতিক্রিয়ায় এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসাইন আজিজী বলেন, ‘আমাদের বড় দাবি পূরণ হয়েছে। এটা আমাদের বড় বিজয়। আন্দোলন করে প্রজ্ঞাপন নিয়ে বাড়ি ফিরছি। আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করছি। আগামীকাল থেকে শ্রেণিকক্ষে ফিরছি।’ গতকাল দুুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে বাড়িভাড়া বৃদ্ধিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা নতুন উদ্যমে শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে তিনি আশাবাদী যে শিক্ষকরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে অবদান রাখবেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গতকাল এক বার্তায় এ তথ্য জানায়। প্রেস উইংয়ের বার্তায় বলা হয়, চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া মূল বেতনের সাড়ে ৭ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে আগামী বছরের জুলাই থেকে বাড়ি ভাড়া আরও সাড়ে ৭ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি যৌক্তিক বলে মনে করে। তবে বাস্তবতা হলো ১৫ বছরের সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গতিশীল হলেও এখনই মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া বৃদ্ধির মতো সামর্থ্য অর্থনীতিতে ফেরেনি। তাই সরকারকে বাস্তবতার নিরিখে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তথ্যমতে গতকাল সকালে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে সচিবালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষক প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। সেখানে ১৫ শতাংশ বাড়িভাড়ার সিদ্ধান্তে ঐকমত্য হয় উভয় পক্ষ। এরপর দুপুরে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সম্মতিপত্র দেওয়া হয়।
১ নভেম্বর থেকে ৭ দশমিক ৫ এবং ২০২৬ সালের জুলাই থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ মোট ১৫ শতাংশ বাড়িভাড়া নির্ধারণ করে চিঠি দিয়েছে অর্থ বিভাগ। অর্থ বিভাগ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিববরাবর এ চিঠি দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপনের দাবিতে ১২ অক্টোবর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির বিভিন্ন পর্যায়ে কালো পতাকা মিছিল, অনশন করেছেন তাঁরা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবিবার শিক্ষা ভবন অভিমুখে শিক্ষকরা থালাবাটি নিয়েও মিছিল করেন।