বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৫ সাল হবে সেই বছর, যখন এআই বাস্তব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে রূপান্তরিত করেছে—অফিস, ব্যবসা, চিকিৎসা ও শিক্ষা—সব জায়গায় এর প্রভাব এখন স্পষ্ট।
নতুন প্রজন্মের এআই এজেন্টের উত্থান
কয়েক বছর আগেও এআই মানে ছিল ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট সিরি, অ্যালেক্সা বা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট। কিন্তু এখন এআই নতুন রূপ নিয়েছে—‘এআই এজেন্ট’।
এই এজেন্টগুলো কেবল নির্দেশ পালন করে না, নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয়, কাজ পরিকল্পনা করে এবং মানুষের সঙ্গে সমন্বয় করে।
অফিসে এখন ই-মেইল বাছাই, রিপোর্ট তৈরি, সময়সূচি সাজানোসহ নানা প্রশাসনিক কাজ করছে এআই। ফলে সময় সাশ্রয় হচ্ছে এবং কর্মীদের সৃজনশীল কাজে মনোযোগ বাড়ছে।
ভিয়েতনামের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এফপিটি তৈরি করেছে ‘এজেন্ট ফ্যাক্টরি’, যা কয়েক মিনিটে তৈরি করতে পারে কাস্টম এআই এজেন্ট। এগুলো বিক্রির তথ্য বিশ্লেষণ করে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে সহায়তা দিচ্ছে।
ব্যাংক ও টেলিকম খাতেও কথোপকথনভিত্তিক এআই ব্যবহার করে ২৪ ঘণ্টা গ্রাহকসেবা দেওয়া হচ্ছে। এসব সহকারী গ্রাহকের প্রশ্নের উত্তর দেয়, অভিযোগ রেকর্ড করে এমনকি কার্ড ব্লক করাসহ জরুরি কাজও সম্পন্ন করে।
জেনারেটিভ এআইয়ে বহুমাত্রিক উন্নয়ন
২০২৫ সালে জেনারেটিভ এআই নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। লেখা, ছবি, ভিডিও ও অডিও—সব একসঙ্গে বিশ্লেষণ ও তৈরি করতে পারছে নতুন প্রজন্মের এআই মডেল।
জিপিটি-৫ ও ক্লোড-৩ মডেল এখন শুধু লেখা তৈরি নয়, বরং চিকিৎসা, ব্যবসা বা গবেষণায় কার্যকর সমাধানও দিচ্ছে।
মাল্টিমোডাল এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে একইসঙ্গে ছবি, শব্দ ও টেক্সট বিশ্লেষণ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এটি একাধিক রোগীর তথ্য ও চিত্র বিশ্লেষণ করে নির্ভুল ফল দিচ্ছে।
এছাড়া স্মল ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল এখন স্মার্টফোন ও ওয়্যারেবল ডিভাইসে চালানো যায়। এতে ডেটা ক্লাউডে না পাঠিয়েই কাজ সম্পন্ন হয়, ফলে গোপনীয়তা ও গতি দুটোই নিশ্চিত হয়।
চিকিৎসায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন যুগ
চিকিৎসাক্ষেত্রে ২০২৫ সালে এআই ব্যবহার নতুন মাত্রা পেয়েছে। রোগনির্ণয়, থেরাপি পরিকল্পনা ও ঝুঁকি পূর্বাভাসে এআই এখন নির্ভুল সিদ্ধান্ত দিতে সক্ষম।
গুগল ডিপমাইন্ড তৈরি করেছে এমন একটি মডেল, যা ক্যানসার কোষের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করতে পারে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে।
এছাড়া এআই টুল এখন ইকোকার্ডিওগ্রাফি ও মেডিকেল ইমেজ থেকে প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করতে পারছে কয়েক সেকেন্ডে।
গবেষকেরা উদ্ভাবন করেছেন ডেলফি-টুএম, যা রোগীর বয়স, জীবনধারা ও পূর্ববর্তী চিকিৎসা ইতিহাস বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যঝুঁকি নির্ধারণ করে।
শিক্ষায় ব্যক্তিগত শেখার সহায়ক এআই
শিক্ষাক্ষেত্রে এআই টিউটর ৩৬০ ও খানমিগো ২.০ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এগুলো শিক্ষার্থীর শেখার ধরন বিশ্লেষণ করে পাঠ্যবিষয় সহজভাবে উপস্থাপন করে।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও এই ধরনের এআইভিত্তিক শিক্ষা অ্যাপ ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে, বিশেষত ভাষা ও গণিত শেখার ক্ষেত্রে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৫ সাল হবে এমন এক বছর, যেখান থেকে মানবসভ্যতা নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে—যুগটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার।
সূত্র: গ্যাজেট গিজমো
বিডি প্রতিদিন/আশিক