হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার
ক্ষতির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পুড়ে যাওয়া কাঁচামালের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, হরমোন, ডায়াবেটিক ও ক্যানসার জাতীয় ওষুধ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ ছিল। গতকাল বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বাপি) তাদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সংগঠনের মহাসচিব মো. জাকির হোসেন বলেন, দেশের শীর্ষ ৪৫টি ওষুধ কোম্পানির প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল আগুনে পুড়ে গেছে। কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে তিনি জানান। কাঁচামালের প্রভাব তৈরি পণ্যের ওপর পড়বে, তাই এতে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে তার পরিমাণ ৪ হাজার কোটি টাকার মতো হবে বলে জানান তিনি। বাপির কোষাধ্যক্ষ হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সিইও মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, ‘পুড়ে যাওয়া কাঁচামালের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, হরমোন, ডায়াবেটিস ও ক্যানসার জাতীয় ওষুধ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ ছিল। এসব কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ওষুধের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, বেশ কিছু স্পেয়ার পার্টস ও মেশিনারিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেগুলো পুনরায় আমদানি করতে সময় লাগবে, ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত হবে।’
এ ছাড়া যেসব পণ্য অন্যান্য বিমানবন্দরে নামানো হয়েছে, সেগুলোর সংরক্ষণ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাপি। কারণ এসব কাঁচামাল বিশেষ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন ঘটলে সেগুলোও নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বাপির মতে, পুড়ে যাওয়া পণ্যের একটি বড় অংশ ছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদিত কাঁচামাল। যেগুলো পুনরায় আমদানির ক্ষেত্রে জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। ফলে, উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ উভয় ক্ষেত্রেই বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এই প্রাথমিক ক্ষতির হিসাব বাড়তে পারে, কারণ প্রতিটি কাঁচামাল একাধিক ফিনিশড প্রোডাক্ট উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। সে হিসাবে কার্গো ভিলেজের এই অগ্নিকাণ্ডে ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে বর্তমানে ৩০৭টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২৫০টি কোম্পানি সক্রিয়ভাবে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ সময় ফার্মা খাতের ঝুঁকি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য সংকট এড়াতে এবং এই খাতের সুরক্ষায় কয়েকটি বিষয়ে সরকারের বিশেষ নির্দেশনার প্রত্যাশা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সেসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, পুড়ে যাওয়া পণ্যের শুল্ক, ডিউটি ট্যাক্স ও ভ্যাট ফেরত; এলসি সংক্রান্ত ব্যাংক চার্জ, সুদ মওকুফ; পুনঃআমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংকসমূহ যেন কোনো মার্জিন, ব্যাংক চার্জসমূহ অথবা সুদ যেন দাবি না করে; এ ছাড়া আরও অন্যান্য সুদ, চার্জ মওকুফ করে নতুন কাঁচামাল আমদানি প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করে দেওয়াসহ মোট ১৪টি বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাপি।